রাশেদ
জামান
আর্কিটেকচার ফার্স্ট ইয়ারের বেসিক ডিজাইন স্টুডিওতে একবার খুব ইন্টারেস্টিং একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলো আমাদের। আপাতত হাল্কা ফান প্রজেক্ট মনে হলেও, শুরু করার প্রথমদিনেই আমি বুঝে ফেললাম, এই জীবনে এর চেয়ে কোনো কঠিন ডিজাইন প্রজেক্ট আর আসবে না। এই যাত্রায় পাশ করতে পারলেই খুশি।
যারা এই লেখাটা কষ্ট করে পড়ছেন, তারা এই অ্যাসাইনমেন্টটি সময় কাটানোর জন্য বাসায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আমাদের সবচেয়ে সিনিয়র টিচার গম্ভীরভাবে বললেন, “একটা পাখির কী কী সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে বলতো দেখি?”
তৎক্ষণাৎ ফার্স্ট ইয়ারের পাখির মতো সুন্দর টার্কিশ মেয়েগুলো কিচির মিচির করে চিৎকার-খিল খিল করে পাখির সুরে বলতে লাগলো- পাখিরা উড়তে পারে, গান গায়, গাছের ডালে বসতে পারে, ঘর বানায়, কিছু পাখি রঙও বদলায় - ব্লা ব্লা ব্লা।
স্যার আদুরে গলায় বললেন – ‘‘মেয়েরা, তোমরা থামো থামো থামো। ইতিমধ্যে যথেষ্ট বলে ফেলেছো। চমৎকার।’’
পাখি বলতে বড় বড় কাক দেখে বড় হওয়া ব্যাকবেন্চার বাঙালি মন আমার মনে মনে বললো, কিছু হারামজাদা পাখি ঠোকর দেয়, সাবান চুরি করে এবং ডাস্টবিনও ঘাটাঘাটি করে।
যাহোক টিচারের কথায় ফিরে আসি - তিনি এবার হাসি হাসি মুখে বললেন, “তোমাদের এবারের অ্যাসাইনমেন্ট হবে - তোমরা ‘পাখি’ ডিজাইন করবে।”
সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আমি কবি মারজুক রাসেলের মতো (মনে মনে) বললাম - “ব্যাপার না”!
এবার স্যার আসল বোমাটা ফেললেন- ‘‘তোমরা যদি ‘স্রষ্টা’ হতে তাহলে পাখির যে গুণাবলী আছে সেগুলো মাথায় রেখে পাখির ডিজাইনটা কী করতে?”
“শর্ত একটাই - তোমাদের ডিজাইন করা পাখির ‘ফর্ম’, (বাংলায় যাকে বলি ‘আকৃতি’) তোমাদের চেনা পাখিদের মতো হতে পারবে না। মোটকথা স্রষ্টার ডিজাইন নকল করা যাবে না। Come up with ur own
unique design of a bird.”
আঁকতে হবে এবং তার উপর আবার মডেলও বানাতে হবে। চ্যালেঞ্জটা ঠিকঠাক অনুধাবন করার পর আমার দম বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা।
আমরা তিন চারদিন ধরে স্টুডিওতে সিগারেটে শক্ত দম দিয়ে খুব ক্রিয়েটিভ ভাব নিয়ে যে যাই চেষ্টা করি না কেনো, শেষ পর্যন্ত কীভাবে যেন আমাদের পাখির ডিজাইন দেখতে একদমই চিরচেনা পাখিদের বেশ কাছাকাছি কিছু একটা দাঁড়িয়ে যায়।
Shape,
Form নতুন ভাবে যাই করি না কেন অন্তত দু পাশে দুইটা পাখা অটোমেটিক চলে আসে। পাখা ছাড়া কোনো
কিছু ভাবাই যাচ্ছে না।
আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যাবার অবস্থা। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। পাখির মতো গান গাইবে, উড়তে পারবে, গাছের ডালে বসবে, দরকার পড়লে রং বদলাবে - কিন্তু দেখতে ‘পাখি’ নামক প্রাণীর মতো হতে পারবে না। কী এক যন্ত্রণা!
আমার প্রিয় বন্ধু তানজানিয়ার খালিদের ডিজাইন করা পাখি দেখে হাসতে হাসতে অন্তত পনেরো মিনিট আমার ‘কাউয়ার কঙ্কাল’ ডিজাইন করার দু:খ বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম।
আমাদের জুড়িতে টিচারদের মন্তব্য শুনে এবং ক্লাসমেটদের- বিশেষ করে লম্বাচুলের পাখিদের কিচির মিচির হাসাহাসিতে যে অপমান বোধ করেছি - আমাকে কেউ লাকড়ি দিয়ে পেটালে এর চেয়ে কম কষ্ট পেতাম মনে হয়।
সেদিন আমি প্রথম সত্যিকার ভাবে অনুধাবন করলাম, আমরা কেউ স্রষ্টার চেয়ে বড় ডিজাইনার হতে পারবো না। সম্ভব না। তিনি সবচেয়ে বড় ডিজাইনার।
সেই কারণেই বোধ হয় সায়েন্স ফিকশন ফিল্মের যতো রোবট, এলিয়েন অথবা ভূতের সিনেমার ভূতরা কোনো না কোনো
ভাবে এ জগতের দেখা প্রাণীদের ডিজাইন এর থেকে সম্পূর্ বিচ্ছিন্ন কিছু হতে পারে না। খুব বেশি হলে সুকুমার
রায়ের ‘হাঁসজারু’ হয়।
এই ঘটনার পর আমার মাথায় দুটো জিনিস কড়াভাবে ঢুকে গেল।
এক- ডিজাইনের সব রহস্য প্রকৃতির ভেতরেই লুকিয়ে আছে এবং
দুই- যে কোনো কম্পোনেন্ট অথবা এলিমেন্টের পিছনে এসথেটিকসের বাইরে একটা ফাংশনাল কারণ অবশ্যই আছে।
আমি সব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ডিসকভারি ও নেট জিও চ্যানেল দেখা শুরু করলাম। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীকে বিশেষ করে পাখাওয়ালা প্রাণীদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ করা শুরু করলাম। প্রাণীদের অঙ্গপ্রতঙ্গ, আকৃতি, প্রকৃতি নিয়ে আমার প্রতিদিনের আবিস্কারে আমি নিজেই মুগ্ধ।
শুধু এক পাখাওয়ালা প্রাণীতে এসে আটকে গেলাম। সেটা হচ্ছে ‘মুরগি’।
মুরগির পাখা থাকার পেছনে না এসথেটিকস, না ফাংশনাল কোনো কারণই আমি খুঁজে পেলাম না। আমি অনেক ভেবেও বের করতে পারলাম না - স্রষ্টা মুরগিকে এই একজোড়া বাড়তি চায়নিজ পাখা কেন দিয়েছেন?
মুরগির পাখার এসথেটিকস নিয়ে কথা বলার কিছু নাই। বেচারারা এই পাখা দিয়ে না পাড়ে উড়তে, না পারে কিছু ধরতে।
স্রষ্ঠার এ ডিজাইনের functional কারণটা সামান্য একজন মানুষ হিসেবে আমার এখনো বোধগম্য না।
আমি কেন্টিনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানজানিয়ার খালিদকে বাংলায় বললাম – “মুরগিরে দুইটা চাইনিজ পাখা না দিয়া, দুইটা হাত দিলে কিছু একটা কইরা খাইতে পারতো বেচারা।”
সিনেমাটোগ্রাফার। আর্কিটেক্ট। আয়নাবাজি মুভির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী। টানা ছয় বছর কাজ করেছেন হলিউডের ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে তার তোলাছবি ব্যবহৃত হয়েছে ২০০৬ সালে বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘এ লিটল পিস’ পিকচার বুকের প্রচ্ছদে। আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছেন ইস্তানবুল, কায়রো এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে। আরো জানতে ভিজিট করুন : www.rashedzaman.com
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
ডা. আতাউর রহমান বিস্তারিত
বজলুল করিম আকন্দ বিস্তারিত
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইম.. বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
বোর্ডের চেয়ারপারসন নির্বাাচিত.. বিস্তারিত