English
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২২-০৬-১২ ০০:২২:২৯
আপডেটঃ ২০২৪-০৪-১৮ ১৯:৫০:৪৮


চক্র

চক্র

পর্ব-১ : আবির্ভাব

 

রুবাইয়াত হাসান সিরাজ

 

অন্ধকার-পিচ্ছিলের ঘনঘটা হাত নাড়ানো আর পায়ের সাথে ফিতে জড়াজড়ি ঘুরপাক খাই আমি সারাদিন কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে কখনো ডিগবাজী বারংবার বাইরের শব্দ শুনতে পাই আধো-আধো একই সূত্রে গাঁথা আমার সাথে এক ফিতে খিদে পেলেই ফিতে ধরে মারি টান রাজা খানখান না হলেও খিদে মরে টানটান আলো দেখি না বুঝি না কিন্তু শুনতে পাই আমাকে কেউ ডাকে, কেউ আদর করে অনুভব করি পর্দার ওপাশে একদল মানুষ স্পর্শ করে পরম মমতায় আমি ঘুরতে থাকি আনন্দে 

১০ মাসের জন্য যে ঘরে থাকলাম, অনুভব করছিলাম সংকুলান হচ্ছে না আর ঘর ভাঙ্গার যোগাড় একদিন তীব্র আলোয় পা দেয়া হঠাৎ অন্যভুবনে লোকে লোকারণ্য অনেকের আত্মহারা জয়গান, কারো মুখে লম্বা এক রত্তি চিহ্ন আমি কোথায় এসে পড়েছি, কেন পড়েছি তা বুঝতে সময় লাগছে বিচিত্র মুখের আনাগোনা চিনেও চিনতে পারি না কাউকে আচ্ছা, আমার ফিতে কোথায়? কেটে দিল কেন? যার সাথে আমার মিশে থাকা এতদিন, তাকে দেখি না কেন আমি? চারপাশের নতুন অথচ খুব চেনা শব্দে মুখরিত হয় আমার আগমন

একটু করে বড় হচ্ছি আমি মা-বাবার মাঝখানে রাতে আনন্দে ঘুমের রাজ্যে চলে যাই পেট ব্যথা করলে দুজনের কাউকে ঘুমুতে দেইনা এক মুহূর্ত ভেতরে ভালোই লাগে কী তাড়াহুড়ো আমাকে নিয়ে! দুনিয়ার রূপ-রস-গন্ধে ১১ মাস কেটে গেল মা-বাবা-দাদা-দাদি-মামা-মামি-নানি-ফুপি-খালা-খালাতো ভাইবোনদের কোলে নিরীহ আনন্দের এক অনবদ্য অংশ আমি সবার চোখের মণি কখনো বুঝতে বুঝতেই সময় কেটে যায়, ঘোর লেগে থাকে ভালোবাসার বলয়ে ভাবতেই অবাক লাগে! কী করে গোলক ধাঁধায় ঘুরতে এত আলোর মাঝে কিছু বুঝে উঠে নেবার আগেই চলে এলাম সবার কাছে?

কিছুটা উন্নতি হয়েছে তা ঠিক হামাগুড়ি, যা পাই তা ধরে দেখার অক্লান্ত ইচ্ছে, দন্তহীন মুখে নতুন খাবারের স্বাদ আর কখনো মায়ের শাসনে মুখ থেকে ফেলে দেয়া মা আমার বুঝে না মুখে দিলেই তার সন্তান অবুঝ না

১৪ মাসের দুরন্ত আমি টুকটুক করে হেঁটে বেড়াই ঘরের প্রতিটি কোণে পায়ের জোড় বেড়ে গেছে ভাবতেই দুর্বিপাক পড়ে যাই আচমকা তাও দাঁড়িয়ে যাই তৎক্ষণাৎ সবাই কি করবে, ভেবে না পাওয়া চেহারা দেখতে খুব ভালো লাগে আমার ছুট্ছুট্আরো ছুট্ কারো চুমু, কারো গাল ধরে টানাটানি আর কারো বা আমাকে শূন্যে ছুঁড়ে দেবার উল্লাস! বুঝতে চেষ্টা করি সবার আমাকে নিয়ে টানাটানি কেন এত? বুঝে পাই না আমাকে কেন বারবার ঘাড় তুলে দেখতে হয়

মাত্র সেদিন কী যেন এক দিন পালন করলো সবাই বিশাল গোঁফওয়ালা লোকগুলো কী বড় চোখ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এল! ইয়া বড় হাত নিয়ে আন্টিগুলো কী নির্বিচারে আমাকে নিয়ে টানাটানি করলো! এইটুকু চিবুক-গালে বিচারহীন অত্যাচারে পিষ্ট হলাম তবুও হাসির কোন শেষ নেই ঘর জুড়ে আমি ভাবলাম সবার এত আনন্দ কেন এই ভুবনে! বুঝলাম আমার হাত নাড়াতেই আর অস্পষ্ট শব্দের বুলিতেই সবার ভালোবাসা জন্মদিন-জন্মদিন বলে খুব মাতামাতি ফিক্করে হেসে দিতেই একদল ছেলে-মেয়ের কী অকৃত্তিম আনন্দ! ঘোর লাগা সেই সন্ধ্যায় অবাক প্রশ্নে বিভোর হয়ে জিজ্ঞেস করলাম নিজেকেআমাকে ঘিরে এত যে আলোড়ন! তাহলে আমি কি অসাধারণ কেউ

কত শিশু আমাদের চারপাশে! পৃথিবী আলো করে জয়ধবনি করতে যখন আসে, মনে নিশ্চয়ই প্রশ্নাতীত আত্মবিশ্বাস থাকে প্রতিটি ক্ষুদ্র অবিশ্বাস্য হৃদয়ে কী ক্লেদহীন এক চিলতে জন্ম! আসমান সমান নীলের ভিড়ে ফিক্করে হেসে দেয়া মেঘের ভেলায় নিশ্চয়ই তারা স্বপ্ন দেখে, চিলের ন্যায় বিমুক্ত সম্ভাবনার  সেই বাজপাখিদের মতো, সেই চিলদের মতো তীব্রস্বরে বলে উঠে,

 

হাওয়া কো বোলো, আপনে অওকাত মে রাহে

হাম পাংখসে নেহি আপনে হোস্লেসে উড়ান কারতে হ্যায়

(হাওয়াকে বলে দাও সে যেন বাড়াবাড়ি না করে, আমি আমার পাখা নই, নিজের বিশ্বাস দিয়ে উড়ে বেড়াই

 

 


ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা,


রুবাইয়াত হাসান সিরাজ

প্রধান নির্বাহী- গ্রাফাইট, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উদ্যোক্তা