English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

প্রকাশঃ ২০২০-১০-০৮ ০৫:৫৩:০৮
আপডেটঃ ২০২৫-০৬-২৫ ১৯:৫৯:০৬


তিন কোটি টাকা !

তিন কোটি টাকা !


মোহাম্মদ সাদেক উজ জামান চৌধুরী

 

ইনশাআল্লাহ্ এমন কিছু লিখবো না যা আমি নিজে বিশ্বাস করি না

কিছুটা পার্থিব বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত। তাই এই লেখার অবতারণা

আমরা একটু কিছুক্ষণের জন্য সব কিছু ভুলে গিয়ে ভাবনা নিয়ে ভাবি

বর্তমানে প্রত্যেক মানুষের একটা সাধারণ ভাবনা হচ্ছে
কেমন করে চলবো সামনে যে দিন আসছে...
নিজের তো কোনো জমা কিছু নেই...
চাকরিটি যদি চলে যায়...
ব্যবসাটা মন্দা যাচ্ছে...
প্রচুর ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবো...
পরিবারের ভরণপোষণ কীভাবে করবো...
ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

চলুন কিছু ভাবিকাগজ কলম নিয়ে বসতে পারেন

কত টাকা আপনার, আমাদের দরকার?
সারাজীবনের জন্য, প্রশ্নটা নিজেকে করুন।
কী কী আপনার চলার পথে লাগবে।
মাসে কত টাকা হলে আপনার পরিবার ভালোভাবে চলবে

আমরা সাধারণ একটা হিসাব নিয়ে বসব।


সুন্দর একটা বাড়ি, ভালো একটা গাড়ি, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ভালো স্কুলে, মাসিক একটা ভালো ইনকাম এবং সম্মানজনক ভাবে বেঁচে থাকা।
এই তো ?

 

চলুন হিসাব করি......... একটু বেশি করেই আমরা ধরবো।
বাড়ি ৬০ লাখ টাকা।
গাড়ি ২০ লাখ টাকা।
মাসে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম।
আমাদের গড় আয়ু ধরলাম ৭০ বছর।
বয়স ২৫ থেকে আয় শুরু করলে আরো ২৫-৩০ বছর অ্যাকটিভ থেকে আয় করা যাবে

ধরলাম।
৩০ বছর মাসে ৫০,০০০ করে আয় করলে কত হয়?
৩০ x ১২= ৩৬০মাস x ৫০,০০০= ১৮,০০০,০০০ টাকা
তাহলে ১৮,০০০,০০০+৬০০,০০০+২,০০০,০০০= ২৬,০০০,০০০ টাকা
আমরা কোটি টাকা ধরি। একদম সব মিলিয়ে। কারো কারো আরো একটু দামি গাড়িও লাগতে পারে।
এখন কীভাবে আসবে এই টাকা?
আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন এই টাকা অনেকে মাসে খরচ করছে। করছে না?
শুরু করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কতোটুকু তে খুশি?
যদি এইটুকু হয় তাহলে আমরা শুরু করতে পারি

 

পরম করুণাময়ের মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আপনার ১৯টা চাওয়ার তালিকা করুনযা আপনি মৃত্যুর আগে পেতে চান।
কত টাকা আপনার ঋণ আছে লিখুন।
কী কী আছে আপনার তালিকা করুন।
কিছুই না থাকলে হাত, পা, চোখ, এইগুলো হলেও লিখুন।
নিজের সম্পর্কে নিজেকে একটা লিখিত স্বচ্ছ ধারণা দিন।
এবার... আপনি প্রস্তুত

১.

প্রতিদিন মনে মনে হাজার বার নিজে নিজেকে বলুন:
‘আমি বিশ্বাসী, আমি সাহসী, আমি পারি, আমি করবো, আমার জীবন, আমিই গড়বো’
‘প্রভু হে ক্ষমা কর, ক্ষমা কর আল্লাহ্।’


নিজ নিজ ধর্মানুসারে ইবাদত প্রার্থনা করুন, ধর্মবানী বাংলাতে বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। সেটার মর্মে প্রবেশ করুন।
অন্যের কল্যাণে কিছু একটা করুন, কিছুই না পারলে অন্তত দোয়া করুন।
চোখ বন্ধ করে দুই বেলা (ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমানোর আগে) তিন কোটি টাকা হলে যা যা করতেন তা তা ভাবুন। মনে সেটার আনন্দকে প্রবাহিত হতে দিন ঝর্ণা ধারার মতো। কোনো প্রশ্নকে প্রশ্রয় দেবেন না। যুক্তি তর্কে যাবেন না মনে মনে, কী হবে , কীভাবে হবে, এটা সম্ভব নাকি। কোনো প্রশ্ন নয়। শুধু চিন্তা করুন।
কল্পনা করুন আপনার প্রাপ্ত রিজিক থেকে চারপাশের মানুষ কীভাবে উপকৃত হচ্ছে।
চিন্তাগুলো মেডিটেশন করে করলে ভালো এবং খুব দ্রুত ফল পাওয়া যেতে পারে।
আচরণে সংযত হোন। বিনয়ী হোন। অন্যের নেতিবাচক কথা এড়িয়ে যান। ক্ষমা করুন ক্ষমা চান।
বিয়ের আগে বিবাহ পরবর্তী আচরণে জড়াবেন না।
পবিত্র হজ্ব পালনের নিয়ত করুন (অন্য ধর্মের হলে সেই ভাবে নিয়ত করুন)
নিজে এবং চারপাশের মানুষ যাকাতদাতা হবার জন্য দোয়া করুন।
নিয়মিত প্রতিদিনের প্রথম খাবার গ্রহণের আগে কিছু দান করুন।
ক্ষতিকর খাবার বর্জন করুন।
প্রাকৃতিক খাবারের পরিমাণ বাড়ান।
সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন, সপ্তাহে একটা রোজা বা উপবাস রাখুন

মৌন থাকুন , নির্দিষ্ট চিন্তা নিয়ে।
আত্নশুদ্ধিতে সময় দিন

২.

যা আপনার আয় হবে সেটাকে পাঁচ দিয়ে ভাগ দিন।(আয় না হলে খরচকে ভাগ দিন)
এক ভাগ দান করে দিন, এক ভাগ জমা রাখুন, বাকি তিন ভাগ আপনার খরচের জন্য রাখুন।
দানটা এমন জায়গায় হতে হবে যেখানে আসলেই কেউ না কেউ স্বাবলম্বী হচ্ছে।
জমাটা হতে হবে সারাজীবনের জন্য। কোনোভাবেই সেখানে হাত দেয়া যাবে না।ওই টাকা রি-ইনভেস্টমেন্টের জন্য ব্যবহার যোগ্য (শর্ত সাপেক্ষে নিজের সাথে)।
যতো বেশি সম্ভব সামাজিক যোগাযোগ বাড়ান, প্রত্যেকের ব্লাড গ্রুপ, ভালো লাগা, পছন্দের খবরাখবর রাখুন
সবার ভরসারস্থল হোন, ওয়াদা রক্ষা করুন, যতই ছোট খাটো হোক না কেন।
ডায়েরি মেনটেইন করুন অথবা স্মৃতিতে রাখার চেষ্টা করুন।
ভার্চুয়াল যোগাযোগ যতোটা সম্ভব পরিহার করুন।
সময় সচেতন হোন।
রক্ত দিন, রক্ত দানে উৎসাহিত করুন।
প্রশংসা এবং সমালোচনায় আনন্দিত ব্যথিত হওয়া ত্যাগ করুন

 

৩.

জমা টাকা থেকে প্রতি বছর .% করে যাকাত দিতে থাকেন।
বিনা পুঁজিতে তিনটি ব্যবসা করুন।
স্বল্প পুঁজিতে তিনটি ব্যবসা করুন।
ব্যবসার জন্য ১০ হাজার টাকা থাকলে প্রথমে চার হাজার টাকা দিয়ে শুরু করুন।
চোখ কান খোলা রাখবেন, সমমনা মানুষ পেয়ে যাবেন। অন্ধ বিশ্বাস করতে যাবেন না। ছোট খাটো বিষয়গুলো নোট রাখবেন। ছোট খাটো লেনদেন এবং লেনদেনে স্বচ্ছতাহীন মানুষ থেকে দূরে থাকুন। নেতিবাচক মানুষকে এড়িয়ে চলুন।
আপনার ঠোঁট দিয়ে নয়, সফলতা দিয়ে জবাব দেয়ার চেষ্টা করুন
একদিন কটাক্ষ করা, খোঁচা দেয়া, পাত্তা না দেওয়া, আপনার হক মেরে দেওয়া, আপনাকে অযোগ্য মনে করা মানুষগুলোই আপনার গাড়িতে বসে আপনার প্রশংসাতে পঞ্চমুখ থাকবে। শুধু আল্লাহকে ভালোবেসে তাদের ক্ষমা করে দিন। তাদের কথাগুলোকে অনুপ্রেরণা হিসাবে নিন।
একই চিন্তা করে এমন মানুষকে নিয়ে ছোট্ট কিছু শুরু করুন, অবশ্যই তার যেন অল্প হলেও ইনভেস্টমেন্ট থাকে।
সুযোগ থাকলে একজনকে মেন্টর হিসেবে নিন। কারো কথা মেনে চলা খুব চমৎকার যখন তিনি আপনাকে আলোকিত পথের সন্ধান দিতে পারবেন বলে আপনার মনের হবে। মেন্টর নির্বাচনের আগে তিনি নিজে কেমন তা আগে যাচাই বাছাই করে নিন। তিনি নিজে সফল এবং স্বচ্ছ চিন্তার না হলে নিজেও ডুববেন আপনাকেও ডোবাবেন। পরামর্শক নিয়োগে সতর্ক থাকবেন

 

ধরুন আপনার বাবার তিন কোটি টাকার সম্পদ আছে, জায়গা জমি, নগদ, সব মিলিয়ে আপনারা ভাই বোন সাত জন, ক্যাশ করে সব কিছু ভাগ করলে আপনার ভাগে আসবে ৪২৮৫৭১৪.২৯ টাকা, এরপর সম্পদ গোছানো, আইনগত ঝামেলা, সিভিল মামলার খরচ, এবং অন্যান্য মিলে আপনার থাকবে কত?

মাঝখানে আপনি হারাবেন কিছু সম্পর্ক, যা ছিন্ন করা মহাপাপের পর্যায়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে পরিচিত সম্পর্ক দিয়ে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। সঠিক একটা পরামর্শেই আপনার জীবনে পালটে যেতে পারে

 

তারচেয়ে সবাই মিলে কোম্পানি গঠন করে সেইগুলোকে নিরপেক্ষ ম্যানেজমেন্ট দিয়ে পরিচালিত করুন। সবাই খরচ বাদ দিয়ে নিজ নিজ অংশ স্বচ্ছতার সাথে ভাগ করে নিন। যদি মনে করেন সেটা সম্ভব না। তাহলে নিজের নাম সকল ঝামেলা থেকে প্রত্যাহার করুন

নিজের ব্যবসায় মনোযোগ দিন এর চেয়ে অনেক বেশি আপনি পেয়ে যাবেন

কোনো ব্যাংক লোন বা যে সুদ ভিত্তিক ঋণ কখনো নেবেন না, ক্রেডিট কার্ড পরিহার করুন

আপনার মেন্টর  দুষ্টবুদ্ধির হলে তিনি পরামর্শ দেবেন,যা কিছু আপনার তা কেন ছাড়বেন।।ছাড়বেন কেন, এটা আপনার হক, মামলা করুন, বেস্ট ল’ইয়ার আমি দিচ্ছি, যা লাগবে আমি আপনার সাথে আছি।’

এই কাজে ভুলেও যাবেন না। আপনার অর্থের শ্রাদ্ধ হবে, মানসিক প্রশান্তি যাবে, মূল্যবান সময় যাবে, সম্পর্ক তো নষ্ট হবেই। যিনি পুরো পৃথিবীর স্রষ্টা তার উপর ভরসা রাখুন, তাকে বলুন. হে পরম করুণাময়, পরম শান্তিদাতা আমি তোমার দিকে তাকিয়ে অশান্তির এই সব ত্যাগ করলাম। তুমি বলেছ, যে তোমার উপর নির্ভর করে তুমিই তার জন্য যথেষ্ট। আমাকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দাও এবং তোমার জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত কর।’

তারপর শুরু করুন...

২৪ ঘণ্টকে তিন দিয়ে ভাগ দিন।
আট ঘণ্টা নিজের আয়, আট ঘণ্টা নিজের উন্নয়ন, আট ঘণ্টা কোয়ালিটি বিশ্রাম নিন।
লাখো মানুষের ভরসার স্থল হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে সেই ভাবে নিজেকে গোছান

বিটুইন লাইন কিছু বিষয় আছে সেটা পড়তে বুঝতে চেষ্টা করুন।


আমি শূন্য থেকে শুরু করা মানুষ, কারো এই লেখা দিয়ে উপকার হলে আমার কষ্ট সার্থক হবে।
অর্থাভাবে তিন মাস শুধু আলু সেদ্ধ করে খেয়েছি লবণ দিয়ে। অনেক কঠিন সময় পার করেছি।
অনাহারে থেকেছি। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। লেখাপড়া তেমন করতে পারি নি।
একজন সার্থক মানুষের জীবনে যা যা থাকে আমার জীবনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সব কিছুই দিয়েছেন। বরং যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন

শোকর আলহামদুলিলাহ।
আমি মহান আল্লাহ্ এবং আমার মেন্টরের কাছে কৃতজ্ঞ, যিনি আমাকে আলোকিত মানুষ হবার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
নিজের চিন্তা কে বড় স্বপ্নে, স্বপ্নকে কল্পনায়, কল্পনাকে পরিকল্পনায় রূপান্তরিত করুন, নিয়মিত দেখুন।
দুনিয়া এবং আখেরাতের যা কিছু কল্যাণকর সব কিছুই, ইনশাআল্লাহ্ আপনার হবে

 

 

লেখক পরিচিতি:

 

 

মোহাম্মদ সাদেক উজ জামান চৌধুরী

ব্যবসায়ী ও সেবক



 


ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা,


আরো পড়ুন