English
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২২-০৩-২৭ ০৯:৫১:২৫
আপডেটঃ ২০২৪-০৪-১৭ ১০:৪৫:১৩


জড়তা

জড়তা


সুমাইয়া নওশিন

নিউটনের প্রথম সূত্র হিসাবে কোনো কিছুতে বল বা শক্তি প্রয়োগ না করলে চলন্ত জিনিস চলতেই থাকবে আর স্থিতিশীল অবস্থায় থাকা জিনিস স্থির ভাবেই থাকবে | মানুষের আগ্রহ বা ইচ্ছা শক্তিটাও ঠিক একই ভাবে কাজ করে | মানুষ যখন একই রকম জিনিস করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তাদের মধ্যে এক প্রকার জড়তা কাজ করে আর তাই তারা 'কমফোর্ট জোন' বা সেই অভ্যাস-এর বাইরে বের হতে চায় না | "মানুষ অভ্যাসের দাস" - এই প্রচলিত প্রবাদটা মানুষের ইচ্ছা-আকাঙ্খার সাথেও সম্পর্কিত | জড়তা কোনোদিনও ভালো ফল দেয় না |

করোনা আসার পর থেকে মানুষের মাঝে এই জড়তা জিনিসটা বেশি কাজ করছে | যেমন ধরুন, বাসায় বসে, আরাম করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনলাইন ক্লাস করতে করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে জড়তা এসে গেছে বলেই অনেকে এখনো চায় না বিছানা ছেড়ে স্কুল-কলেজ যেয়ে সামনাসামনি ক্লাস করতে | এমন কী অনেক শিক্ষকও এই জড়তার কারণে অফলাইন চান না |

আজকাল মানুষজন আত্মীয়দের সাথে কম মেলামেশা করতে করতে আগের যুগের মতো আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক আর বজায় রাখতে পারছে না | আত্মীয়দের থেকে দূরে থেকে থেকে এক প্রকার জড়তা কাজ করে তাদের কাছে যাবার |

বন্ধুদের মাঝে সম্পর্কেও ফাটল ধরা পরে এই জড়তার কারণেযাদের সাথে প্রতিদিন দেখা হতো, আড্ডা হতো, তাদের সাথে ব্যস্ততা বা করোনা বা অন্য কারণে সময় না কাটাতে কাটাতে অনেকের মধ্যে জড়তা কাজ করতে থাকে বিধায় বন্ধুদের সাথেও আর আগের মতো সময় কাটাতে চায় না| মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকে না বন্ধুদের সাথেও দেখা-সাক্ষাৎ করতে | সমস্যা হলো, এখানে ভুল-বুঝাবুঝি কাজ করে | এক পক্ষ, যাদের মধ্যে এখনো জড়তা কাজ করে নি, তারা মনে করে অন্য পক্ষ যাদের মধ্যে জড়তা আছে, তারা বদলে গেছে; তাদের মধ্যে আগ্রহ আর নেই এই বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে | তখন হয় রাগ-অভিমান- মনোমালিন্য | এক পক্ষ প্রশ্ন করে, "কীভাবে তোর আগ্রহ হারিয়ে গেল আমার জন্য?"

আরেক পক্ষ ভাবে, "এতো ঘন ঘন দেখা করে কী হবে? যখন বাধ্য হয়ে দেখা করা লাগবেই বা দেখা হবেই তো, তখন দেখা-সাক্ষাৎ-আড্ডা দিলেই তো হলো | দেখা না করলেই কি বন্ধুত্ব শেষ? বন্ধুত্ব কি শুধু দেখা হওয়ার উপরেই টিকে আছে?"

জড়তার কারণে কউকে একটু কল দেয়া বা মেসেজ দেয়াও হয়ে উঠে না, খোঁজ-খবর নেয়া হয় না | তখন শুধু বন্ধুত্ব না, যে কোনো সম্পর্কেই ঝগড়া বাধে বা সম্পর্কগুলো নড়বড়ে হয়ে যায় |

যেহেতু পৃথিবীতে একেক মানুষ একেকরকম, তাই আমাদের উচিত সবার দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝতে চেষ্টা করা সম্মান করা | যেখানেই জড়তা কাজ করে, সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে এবং অন্য পক্ষকেও সাহায্য করা আর সময় দেয়া লাগবে জড়তা থেকে বের করে আনার জন্য ওই পক্ষকে | কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে সবারই কষ্ট হয়, তবে বের হয়ে গেলেই আবার আগের মতো সব 'নরমাল' ভালো লাগে | দেখা করতে করতে যখন না দেখা হয়, তখন মানুষ ঐটাই মিস করে; আবার না দেখা করতে করতে তখন দেখা না করেই থাকতে চায় | এজন্যই শুরু তে বলেছিলাম, "মানুষ অভ্যাসের দাস" | এইটা আমাদের সবার মাথায় রাখতে হবে | আমরা আমাদের মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাই | তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা শুধু 'মন' না, মস্তিষ্ক/ব্রেইনের কথাও শুনি; মন ব্রেইন এর মধ্যে ব্যালান্স করে চলি | অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিটা বুঝে নিজের কমফোর্ট জোন-এর বাইরে গেলেও কাজ করা উচিত যদি সেটাতে অন্য পক্ষ খুশি হয় | অন্যের বা 'আপন' মানুষদের খুশির জন্য নিজের একটু জড়তা কাটিয়ে উঠা কি খুব কঠিন কিছু?

 

 


ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা,


সুমাইয়া নওশিন

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ইউল্যাব