রাশেদ
জামান
কয়েকদিন আগে গভীর রাতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম কানাডা থেকে কাতার হয়ে আগত ছোট ভাইকে তার পরিবারসহ রিসিভ করতে।
সাধারণত তিনশত টাকা দিয়ে টিকেট কিনে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত arrival lounge এ ঢোকা যায়। এবার করোনা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ভেতরে না গিয়ে শক্ত লোহার গ্রিলের বাইরে দাড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষের ভিড়ের ধাক্কায় দাঁড়াতে হলো। এর আগে সব সময় এই উপচে পড়া মানুষদেরকে আমি গ্রিলের ওই পাড় থেকে দেখেছি।
সবাই প্রাণপণ চেষ্টায় উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তাদের প্রিয়জন এসেছেন কিনা। আমিও তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামলাম।
হঠাৎ কাঁধে ছোট বাচ্চা সহ এক বিভ্রান্ত বৃদ্ধ ভদ্রলোককে দেখলাম অসহায় ভাবে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছেন। সমস্যাটা মিনিটেই জানতে পারলাম। তিনি যে মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন সেই মাইক্রোবাসের চালক অ্যাডভান্স টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন।
রাত তখন ৪টা।
Flight, Delay, Arrival, Landing - কোনো শব্দের সাথেই তার মতো আরো শত প্রান্তিক মানুষ স্বাভাবিক কারণেই পরিচিত না।
তাদেরকে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ধমকানোর মানুষ থাকলেও, ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বলার কেউ নেই।
আমি আমার একমাত্র অস্ত্র ফোন ক্যামেরা অনেক আগেই পকেট থেকে বের করেছি। বৃদ্ধ তার ছেলের বউ এবং দুই কোলের নাতিসহ বাসে চেপে বহুদূরের কোনো অজপাড়াগাঁ থেকে ঢাকায় এসেছেন এয়াপোর্টে। বহু প্রতীক্ষিত এই দিনে প্রবাস ফেরত ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে নেবার জন্য মাইক্রোবাস ভাড়ার টাকা হারিয়ে তিনি দিশেহারা। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। এটাও বুঝতে পারছেন না তার ছেলে সত্যিই এসে পৌঁছেছেন কিনা।
তার ছেলের বউয়ের মতো অসংখ্য বউ, মা, বোন, সন্তানদের ভোর রাতের উৎকন্ঠায় ক্লান্ত চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারছিলাম না।
মাঝে মাঝে অবাক হই। সামান্য বুদ্ধিদ্বীপ্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে সামান্য সমস্যা অনেক প্রকান্ড হয়ে যায় এই হযবরলের দেশে।
Arrival , Immigration, Custom অথবা Final Exit Gate-এ (নিরাপত্তার সুবিধা বিবেচনায় রেখে সুবিধা অনুযায়ী) দু একটা HD ক্যামেরা তাক করে গ্রিলের বাইরে বড় ডিজিটাল স্ক্রিনে Live Stream করলেই প্রিয় মানুষের আগমন বিষয়ে পরিবারের মানুষরা নিশ্চিত হতে পারেন।
মানুষের ভিড়ে ঠ্যালাঠ্যালি করে তীক্ষ্ণ চোখে দূরবীনের মতো zoom করে একটা একটা মানুষ গুনতে হয় না।
অব্যবস্থাপনা এখানেই শেষ নয়। প্রিয়জনকে শনাক্ত করার পর প্রাণপণ চিৎকার করে যোগাযোগ করার পরও, মূল গেটের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মিলবে না যদি আপনার সাথে চার চাকার গাড়ি না থাকে। তিন চাকার সি.এন.জিকে বহু কষ্ট করে অনুনয় বিনয় করে ঢুকতে হয়।
আগত যাত্রীদের ফ্রি ফোন করার ব্যবস্থা করে দেয়াটা কি খুব কঠিন? এই জীবনে কোনোদিন কাজ করে নাই সেই Wi-Fi রেখে কী লাভ? এই মানুষগুলো সবাই জানেন কীভাবে নানা রকম apps থেকে ফোন করতে হয়। একটা ঠিকঠাক Wi-Fi কানেকশনই যোগাযোগ স্থাপনের জন্য যথেষ্ট। Departure এ ফরম পূরণ থেকে শুরু করে arrival এ বিভ্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাহায্য করার জন্য সদ্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ ইন্টার্নদের নিয়োগ দেয়া কতটা কঠিন?
যাইহোক, পায়ে হেঁটে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেন না নিরাপত্তাকর্মীরা। ভেতরে যেতে হলে গাড়িতে চড়ে যেতে হবে! তারপরও পোশাক আশাক ও বাচনভঙ্গির ধাপকির জোরে দু’চারজন মানুষ কেবল ম্যানেজ করে ঢুকতে পারেন।
বাংলাদেশই মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সরকারি মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত সব জায়গায় প্রাপ্য অধিকার আদায়ে, ন্যায্য হিসেব বুঝে নিতে সব সময় ‘নিজের লোক’ থাকতে হয়।
সেই সূত্র মোতাবেক কিছু মানুষ আগে থেকেই arrival lounge-এ ঢুকে বসে আছেন ‘আমার লোক আছে’ বাগধারার জোরে।
অন্যদিকে গ্রিলের ওইপাড়ে মাইক্রোবাসের টাকা ম্যানেজ করেও প্রতারণায় হারিয়ে ফেলা অথবা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত লাউঞ্জে ঢোকার তিনশত টাকার পাস কেনার সামর্থ্য না থাকা উৎকন্ঠিত দিশেহারা পরিবারের মানুষগুলোর শেষ অবলম্বন থাকে- নিরাপত্তায় থাকা ভাইদেরকে প্রবল আকুতি মিনতি করা। কেউ কেউ মন গলাতে পারেন, কেউ পারেন না। ওভার ডিউটি করা বেচারা নিরাপত্তাকর্মীরাও লোকবলের অভাবে ক্লান্ত, বিভ্রান্ত। কার কথা বিশ্বাস করবেন, কারটা করবেন না- সে আরেক অরাজগতা।
যে প্রবাসী শ্রমিক ভাইবোনদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায় আমার বহু মেগাপিক্সেল ফোনক্যামেরা কেনা, তাদের বহু প্রতীক্ষিত প্রত্যাবর্তন এর প্রক্রিয়াকে চাইলেই পরিবারবান্ধব করা যায়।
নিজের দেশের নিজের মাটিতে ফিরে আসাটা আনন্দের না হয়ে এতটা উৎকন্ঠার হতে হবে কেন?
এই দেশে প্রত্যাশা একটাই, ‘ধমকের স্বরের’ সংখ্যা কমে, ‘সাহায্যের হাতের’ সংখ্যা বাড়ুক।
ছবি: লেখক
সিনেমাটোগ্রাফার। আর্কিটেক্ট। আয়নাবাজি মুভির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী। টানা ছয় বছর কাজ করেছেন হলিউডের ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে তার তোলাছবি ব্যবহৃত হয়েছে ২০০৬ সালে বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘এ লিটল পিস’ পিকচার বুকের প্রচ্ছদে। আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছেন ইস্তানবুল, কায়রো এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে। আরো জানতে ভিজিট করুন : www.rashedzaman.com
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মাইক্রোসফট অফিস স্পেশালিস্ট (M.. বিস্তারিত
মুস্তাকিম আহমেদ বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত