অগ্রগতির অসাধারণ এক সূত্র!
নাহিদ হাসান
শেখার দুটি রাস্তা। ভুল করা অথবা অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া। আমি নিজেও অনেক কিছু শিখেছি ভুল করতে করতে, যেখানে আমাকে টাকা এবং সময় দুইই গচ্চা দিতে হয়েছে এসব শেখার জন্য।
আবার ইন্ডাস্ট্রি কলিগদের কাছ থেকে, ব্লগ পোস্ট পড়ে, বই
পড়ে, কোর্স করে অনেক কিছু শিখেছি। এক্ষেত্রে আমাকে স্রেফ কিছু সময় এবং টাকা ইনভেস্ট করতে হয়েছে। তবে কোনো টাকা গচ্চা দিতে হয়নি মোটেও।
যেমনটা বলছিলাম, আমার কিছু লাইফ লং লার্নিং আছে যা আমাকে অনেক ভুল করতে করতে, অনেক মূল্য দিয়ে শিখতে হয়েছে। হ্যাঁ, টাকার অংকে চিন্তা করলে তা প্রায় ১৫-২০ লাখে দাঁড়াবে সন্দেহ নেই। তবে আজ এই ১৫-২০ লাখ টাকা লসের বদৌলতে পাওয়া শিক্ষাটা আপনাদের কাছে শেয়ার করবো বিনামূল্যেই!
প্রথমেই নিজের বর্তমান প্রফেশনাল অবস্থার কথা চিন্তা করা যেতে পারে। দেখুন, আমি যেখানে আছি হয় ভালো আছি অথবা খারাপ আছি।
খারাপ থাকলে আমি কিছু সমস্যার মধ্যে আছি যার সমাধান আমার জন্য কষ্টকর। আর
ভালো থাকলে হয়তো আমি বড় কিছু প্ল্যান করেছি যেটাকে অ্যাচিভ করতে হলেও আমাকে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করতে হবে। দুটোই চ্যালেঞ্জিং।
আপনি যখন স্কেলআপ করতে যাবেন অথবা কোনো বড় সমস্যার সমাধান করতে চাইবেন তখন দেখবেন অবস্থা অনেকটা এমন হয়।
আমার একজন ভালো ম্যানেজার দরকার, কিন্তু তার জন্য টাকা লাগবে।
এছাড়া… ভালো ম্যানেজার কীভাবে হায়ার করবো?
একজিস্টিং টিমের অ্যাফিশিয়েন্সি কীভাবে বাড়াবো?
ক্লায়েন্ট কীভাবে বাড়াবো?
কীভাবে বাড়াবো ক্লায়েন্ট রিটেনশন?
অফিসে নতুন কম্পিউটার দরকার।
টাকা দরকার।
একজিস্টিং টিমে অনেক সমস্যা, এগুলো কীভাবে সমাধান করবো?
এই লিস্ট কিন্তু বাড়তেই থাকবে!
আমরা যখন এরকম একাধিক সমস্যায় থাকি তখন আসলে মাথা কাজ করে না। মনে হয় একটি গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম। এটা সলভ করলে ওটা থেকে যায়, ওটা করলে আবার আরেকটা এসে পড়ে।
এটা খুবই স্বাভাবিক। যে যেখানেই থাকুক না কেন সবার সাথেই এমনটা হয়। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বিশ্বাস করুন, এই সমস্যার একটা স্মার্ট সলিউশন আছে।
একে বলে– ‘ইমম্প্রুভ ওয়ান থিং অ্যাট এ টাইম’…
কীভাবে?
প্রথমেই আমরা আমাদের সমস্যাগুলো একটি কাগজে লিখে ফেলবো। যত সমস্যা আছে সবগুলো। লিস্ট বড় হোক তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
এবার লিস্টটাতে চোখ বোলাই এবং মার্কিং করতে থাকি:
১. কোন সমস্যাগুলো বড় সমস্যা এবং ইমিডিয়েট সলিউশন দরকার
২. কোন সমস্যাগুলো বড় সমস্যা কিন্তু ইমিডিয়েট সমাধান লাগছে না
৩. কোন সমস্যাগুলো ছোট সমস্যা কিন্তু ইমিডিয়েট সলিউশন দরকার
৪. কোন সমস্যাগুলো ছোট সমস্যা এবং ইমিডিয়েট সলিউশন দরকার নেই
প্রথমে ধরা চাই বড় সমস্যা যার ইমিডিয়েট সলিউশন লাগবে। তারপর
ছোট সমস্যা যেখানে ওরকম ইমিডিয়েট সলিউশন প্রয়োজন। তারপর বড় সমস্যা কিন্তু সলিউশন একটু বিলম্বিত হলেও সমস্যা নেই এরকম সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আর সবশেষে সময় পাওয়া গেলে ৪ নাম্বার ক্যাটেগরির সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করা যায়।
তবে হ্যাঁ, এক এক সমস্যার এক এক রকম সমাধান এটা মাথায় রাখতে হবে। কিছু সমস্যা আছে যা চট করে সমাধান করা যায়। যেমন ধরুন, আপনার টাকা দরকার। একটা কম্পিউটার কিনতে হবে। এর সমাধান হচ্ছে টাকা ম্যানেজ করা। টাকা ম্যানেজ হলে এক নিমিষেই সমাধান!
আবার কিছু সমস্যা আছে যেটা আপনি চাইলেও ধুপ করে সমাধান করতে পারবেন না। যেমন ধরুন, আপনার টিমের কাজের কোয়ালিটিতে আপনি খুশি না অথবা তারা নিয়মিত ডেডলাইন মিস করে। এই সমস্যার সমাধান আপনাকে স্ট্র্যাটেজিক উপায়ে করতে হবে। আপনাকে একটু একটু করে তাদের কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করতে হবে। ডেডলাইন এনশিওর করার জন্য তাদের একটু একটু করে পুশ করতে হবে। যেন চাপের পাশাপাশি সম্মান, স্নেহ, সহমর্মিতা সবই বজায় থাকে।
মনে রাখতে হবে- ডেইলি একটু ইমপ্রুভমেন্ট মাস শেষে একটু অগ্রগতি, বছর শেষে অনেক অগ্রগতি।
চলুন সেক্ষেত্রে আমার রিয়েল লাইফ একজাম্পল শেয়ার করি।
আমাদের একটা ‘সাপ্তাহিক রিপোর্টিং’ থাকে। প্রথম প্রথম নতুন রিপোর্টিং স্টাইল হিসাবে টিমের সবার কাছে এটা
মোটেও তেমন আরামদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল না। এক ঘণ্টার মিটিং দুই ঘণ্টা লাগতো। ভুলবশত অনেক অপ্রয়োজনীয় ইনফরমেশন স্টোর করে অনেক জরুরি ইনফরমেশন উপেক্ষা করতাম।
আবার আমরা শুরু করেছিলাম ‘আসানা’ দিয়ে, তারপর মুভ করলাম এক্সেলে। এক্সেলে দেখলাম নাম্বারগুলো সুন্দরভাবে হাইলাইটেড থাকে ঠিকই, কিন্তু যেখানে রিপোর্টিংয়ের সাথে নাম্বারের কানেকশন নাই সেই অংশটুকু স্ক্যানাবল না। এছাড়া উইকলি আপডেটের পর আমাদের অ্যাকশন আইটেমগুলো ডিসাইড করা হতো না। যার ফলে উইকলি আপডেট থেকেও ম্যাক্সিমাম অ্যাডভান্টেজ পাওয়া যেত না।
এরকম আরও অনেক কিছুই আছে যা ‘ধীরে কিন্তু প্রত্যাশিতভাবে’ সলভ হয়েছে অর্থাৎ ইমপ্রুভমেন্ট এসেছে। টুলস, ফরমেট, কন্টেন্ট স্ট্রাকচার এসব চেঞ্জ হয়েছে এবং আমরা বুঝতে পেরেছি ঠিক কোথায় কোথায় ইমপ্রুভমেন্ট প্রয়োজন।
এখন আমাদের এই মিটিংয়ে অনেক সময় কথাই বলা লাগে না যেটা
ভারবাল কমিউনিকেশনের লোড থেকে আমাদের বাঁচায়, স্নায়ু সবল রাখে। আমরা ধীরে ধীরে এর ফরমেট সহ সব কিছু ইমপ্রুভ করেছি। আগে যে পরিমাণ সময় লাগতো এখন তার ২০% সময়ে তার চাইতেও ইফেক্টিভ এবং প্রোডাক্টিভ উপায়ে আমাদের এই সাপ্তাহিক রিভিউ সম্পন্ন হয়। হয়তো
সামনে আরও অনেক ইমপ্রুভ হবে।
এত এত ভুল করার পর আমার যে লার্নিং সেটা হলো- একসাথে অনেক কিছু প্যাঁচ লেগে লেগেও প্যানিকড হওয়া যাবে না। সিস্টেমেটিক ওয়েতে ভাবতে হবে, চেষ্টা
করতে হবে। সব কিছু ইমিডিয়েটলি কাজ করবে না। তবে যদি আমরা ‘ইম্প্রুভ ওয়ান থিং অ্যাট এ টাইম’ সূত্রে ধরে কাজ করি, তাহলে
সমস্যাগুলোর দ্রুত এবং কার্যকর সমাধান সম্ভব।
ইন্টারনেট মার্কেটার এবং উদ্যোক্তা প্রধান নির্বাহী, বিজকোপ www.bizcope.com
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মাইক্রোসফট অফিস স্পেশালিস্ট (M.. বিস্তারিত
মুস্তাকিম আহমেদ বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত