মুস্তাকিম আহমেদ
“সালাম দাও, দাদাকে সালাম দাও।”
শিশুটি হাত উঁচু করে একটা শব্দ করলো, “আ তু”।
তার বয়স ১৯ মাস। বড়দের সালাম দিতে হয়, এটা আদব- তা বোঝার মতো বয়স তার হয় নি।
বড়দেরকে দেখিয়ে তার মা বাবা বারবার সালাম দিতে বললে সে একসময় সালাম দেয়া শিখে যায়।তার মাথায় ‘প্রোগ্রাম’ এসে যায়- ‘বড়দের সালাম দিতে হয়।’
শিশুটি যখন পূর্ণ যুবক, সে বড়দের দেখলে সালাম দেয় কারণ শিশু বয়সে শেখা প্রোগ্রাম।
গবেষণায় দেখা গেছে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৯৫% আচরণ ও কাজের জন্য দায়ি তার প্রোগ্রাম।
মজার ব্যাপার হচ্ছে বেশির ভাগ প্রোগ্রাম আমরা শিখি জীবনের প্রথম সাত বছরে!
সাত বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ খুব স্থির। এর নাম থিটা।
থিটাকে বলা হয় কল্পনা। এই বয়সী শিশুরা কল্পনার রাজ্যে বাস করে। তাইতো তারা কাদা দিয়ে বানায় কেক, ঝুল ঝাড়ুতে চেপে বিপুল বেগে ঘোড়া ছোটায়!
এই সবকিছু কিন্তু তাদের কাছে বাস্তব। এ বয়সে যেসব প্রোগ্রাম তারা পায় তা তাদের অবচেতন মনে থেকে যায়। অবচেতন মন বাকি জীবনকে প্রভাবিত করে।
তাই দেখা যায় একজন ধনীর সন্তান, হয়তো সে তেমন মেধাবী নয়, তারপরও ধনী হতে পারে।
কেন?
ছোটবেলার ধনী জীবনের অভ্যাস, রীতিগুলো তার অবচেতনে থাকে। তাই তাকে ধনী হবার পথ দেখায়।
আর দরিদ্র পরিবারে?
‘জীবন অনেক কঠিন’-এ জাতীয় প্রোগ্রাম পেতে পেতে মেধাবী হয়েও শুধুমাত্র দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ার কারণে অনেকে দরিদ্রই থেকে যায়। তাদের অভাব দূর হয় না।
বড় হয়ে আমরা কিছু ক্ষেত্রে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তার মানে ওই বিষয় সংক্রান্ত কোনো বাজে প্রোগ্রাম অবচেতনে আছে।
একজন মানুষ ছোটবেলায় মা বাবার ঝগড়া, পারিবারিক কলহ দেখে বড় হয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ারে সফল হলেও বিবাহিত জীবনে তিনি মারাত্মক অসুখী। এর কারণ- ওই যে প্রোগ্রাম!
এর সহজ প্রতিকার আছে কিন্তু!
প্রথমে বুঝতে হবে কোথায় কোথায় আমি ঠিক পেরে উঠছি না। ধরে নিচ্ছি, আমি অসুখী।
তারপর?
দুটি কাজ!
এক. নিজেকে সবসময় বলা ‘আমি সুখী’ , ‘আমি সুখী’।
দুই. Fake it till You get it!
অভিনয় করা! সুখী হওয়ার যাবতীয় অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা।
এই যে আমি বলছি ‘আমি সুখী’, কাকে বলছি? বলছি আমার অবচেতন মনকে।
বারবার বলে, অভিনয় করে আমরা অবচেতনের তথ্য যা প্রোগ্রাম তৈরি করে তা সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারি।
সুখ, সাফল্য সহ যে কোনো কিছুকে পরিণত করতে পারি প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায়!
আমাদের জয়যাত্রা এবার শুরু হোক!
(একটি সত্য ঘটনা)
সবসময় দামি পোশাক, ভীষণ ফিটফাট! ভদ্রলোকের নাম ইসতিয়াক খান, বয়স ৪৬,ব্যবসায়ী।
ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে, ধার করে চলছেন ওই অবস্থাতেও দেখতাম ইসতিয়াক ভাই দামি জামা কাপড় কিনছেন।
কৌতুহলবশত একদিন এর কারণ জানতে চাইলাম। প্রশ্ন শুনে তিনি নীরব হয়ে গেলেন।
“চল চা খাই।”
চায়ের কাপে চুমুক দিতেই ইসতিয়াক ভাই এর মুখে হাসি দেখা দিল!
“অনেকদিন আগের কথা। সেই আমলে আমরা ছিলাম একান্নবর্তী পরিবার। বাড়িতে ভীষণ হইচই কারণ ছোট চাচার বিয়ে! আমার মা বাবাও খুব ব্যস্ত। সন্ধ্যায় বরযাত্রী যাবে। বিপুল তোড়জোড় চলছে!
আমি সারাদিন দুষ্টমিতে নোংরা হওয়া কাপড় পরেই সন্ধ্যায় বরের মাইক্রোবাসে গিয়ে উঠলাম। আমার মা বাবা ছিলেন অন্য গাড়িতে।
কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি ছাড়বে।
বর ছোট চাচা গাড়িতে উঠার জন্য দরজা খুললেন। তার চোখ পড়লো আমার ওপর।
“আরে! তুই এই কাপড় পড়ে বিয়ে বাড়ি যাবি? গাড়ি থেকে নেমে যা! এক্ষুনি নাম!”
নোংরা কাপড় পরে থাকায় ছোট চাচা আমাকে সেই সন্ধ্যায় সবার সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন।
ইসতিয়াক ভাই এরপর নিজের মাথার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “সেই যে মাথায় ঢুকলো, ভালো কাপড় না পরলে লজ্জা পেতে হয়...”
“তখন আপনার বয়স কতো ছিল?”
“কত আর! এই ছয়/সাত বছর!”
Dr. Bruce Lipton এর HOW WE ARE PROGRAMMED AT BIRTH ভিডিও অবলম্বনে
সিনিয়র শিক্ষক, বিজনেস, মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মাইক্রোসফট অফিস স্পেশালিস্ট (M.. বিস্তারিত
মুস্তাকিম আহমেদ বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত