নাহিদ হাসান
দেখতে দেখতে নতুন বছর চলে এলো, এই বছরের প্রাপ্তি একেক জনের কাছে একেক রকম হবে, কারো সব গোল
অ্যাচিভ হয়েছে। কারো হয়ত লক্ষ্য মাত্রার চাইতে বেশি এচিভ হয়েছে, কারো হয়ত কম। কারো অনেক কম। কারো হয়তো কোনো লক্ষ্যই ছিল না।
যাই হোক, এভাবেই আমাদের বছর আসে, আবার বছর চলে যায়। প্রতি বছরের শুরুতেই আমরা অনেক প্ল্যান করি, ভাবি এই বছরটা ডিফারেন্ট হবে। এবার সব ভুল গুলো থেকে যা শিখেছি, তা কাজে লাগাবো, কিন্তু বেশির ভাগ সময় বছর শেষে দেখা যায়, আগের বছরের মতোই একই ভুল করেছি, অনেক গোল অ্যাচিভ হয়নি। আপনি হয়ত ভাবছেন, আমার ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে, বাকিরা ঠিকই এগিয়ে গিয়েছে, কিন্তু ব্যাপারটা পুরাপুরি সত্য নয়। আপনি একটু খোঁজ নিলে দেখবেন, বাকিদের অবস্থাটাও অনেকটা আপনার মতোই।এতে অবশ্য খুশি হবার কিছু নেই, তবে ফ্র্যাস্ট্রেশনের মাত্রা কমাতে পারেন। ভাবতে পারেন আপনি বেশি পিছিয়ে পরেন নি। যদিও আমি অন্যের সাথে তুলনা করার বিপক্ষে।
আমরা বেশির ভাগ সময় মনে করি, যা কিছু খারাপ তা শুধু আমার সাথেই ঘটে। কিন্তু একই রকম ঘটনা আরো অনেকের সাথেই ঘটে। পার্থক্য তৈরি করে কে কীভাবে রিয়েক্ট করছে তার ওপর।
যাই হোক আমার এই পোস্ট লেখার মূল উদ্যেশ্য হচ্ছে সিস্টেমেটিক ওয়েতে গোলটাকে ডিসাইড করা। এটা
আপনাদেরকে হয়তো সয়াহতা করবে, একই ভাবে আমাকেও সাহায্য করবে নিজের গোলটাকে গুছিয়ে নিতে।
লক্ষ্য নির্ধারন করা কেন প্রয়োজন
হারভার্ড বিজনেস স্টাডির একটি ডেটা শেয়ার করছি,
* ৮৩ ভাগ মানুষের কোনো গোল নেই
* ১৪ ভাগ মানুষের গোল আছে, কিন্তু কোনো প্ল্যান তৈরি নেই, এবং কোথাও লেখাও নেই
* তিন ভাগ মানুষ তার গোল লিখে রাখে
স্টাডি থেকে দেখা গিয়েছে, যেই ১৪% মানুষের গোল আছে তারা বাকি ৮৩ ভাগ মানুষের চাইতে ১০ গুণ বেশি সফলতা অর্জন করে থাকে। আবার যেই তিন ভাগ মানুষ তাদের গোল লিখে রাখে, তারা এই ১৪ ভাগ মানুষ যাদের গোল আছে, কিন্তু লিখে রাখে না, তাদের চাইতে তিন গুণ বেশি সফল। লিখে রাখলে এটা আমাদেরকে প্ল্যান তৈরি করতে সহায়তা করে, আমাদেরকে রিমাইন্ডার দেয়, এবং আমরা ট্র্যাক থেকে ছিটকে পরলেও দ্রুত ব্যাক করতে পারি।
গোল এবং স্মার্ট গোল এর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে, তা নিচে আলোচনা করছি।
স্মার্ট গোল কী?
S = স্পেসিফিক
M = মেজারেবল
A = অ্যাচিভেবল
R = রিলেভেন্ট
T
= টাইমলি
আমাদের লক্ষ্যটি স্পেসিফিক হতে হবে, এমন হতে হবে যাতে আমরা তা পরিমাপ করতে পারি, অন্যথায় আমরা কতোটুক অ্যাচিভ করতে পারছি তা বুঝতে পারবো না। এমন গোল হতে হবে, যা অ্যাচিভ করার মতো। যেমন আমি যদি এখন বলি এক বছরে আমার প্রতিষ্ঠান আমাজনের চাইতেও বেশি গ্রো করবে, এটা আমার জন্য এই মুহূর্তে অ্যাচিভেবল নয়। এটি রিলেভেন্ট হতে হবে, এবং একটি ডেডলাইন/টাইম ফ্রেম থাকতে হবে।
যেমন ধরুন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে আমি আমাজন প্রজেক্ট থেকে এই অ্যামাউন্টের রেভিনিউ জেনারেট করতে চাই। তাহলে আমার জন্য সহজ এটাকে মেজার করা, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা এবং সামনে এগিয়ে চলা।
এখন যদি আমার লক্ষ্য এমন হতো, আগামি বছরে আমি অনেক ভালো ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাই, তাহলে আমি এটাকে কীভাবে মেজার করবো? কীভাবে বুঝবো আমি ভালো ডিজিটাল মার্কেটার হয়েছি কিনা? তাই আমাদের সব সময় স্মার্ট গোল সেট করতে হবে, যাতে আমরা পরিমাপ করতে পারি।
এবার আসুন আমরা স্মার্ট গোল সেট করি
১. শেষ থেকে শুরু করা
প্রথমেই আপনি নিজেকে/নিজের প্রতিষ্ঠানকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোথায় দেখতে চান, তা ডিসাইড করুন।
কীভাবে ডিসাইড করবেন?
যদি আপনি নতুন প্রফেশনাল না হয়ে থাকেন, তাহলে ইতি মধ্যেই আপনার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আইডিয়া আছে। আপনি মার্কেট গ্যাপগুলো জানেন, আপনার দক্ষতা সম্পর্কেও আপনার আইডিয়া আছে। এই সবগুলো বিষয় মাথায় রেখে আপনি ডিসাইড করতে পারেন।
আবার এই বছরের পার্ফরমেন্স আপনাকে এক ধরনের ডেটা দেবে, কতোটুকু অ্যাচিভ করা সম্ভব। কিন্তু এ বছরের ডেটার উপর বেশি নির্ভর করার দরকার নেই। কেননা এতে গোলটি ছোট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের সবসময় একটু বড় গোল সেট করা উচিৎ। যা অর্জন করা সাধারণ হিসেব নিকেষে সহজ নয়। এটা অ্যাচিভ করতে হলে আউট অফ দি বক্স চিন্তা এবং কাজ করতে হবে।
২. গোলটিকে চারটি কোয়ার্টারে ভাগ করা
এবার আপনার ২০২১ সালের মূল যে গোল, তাকে চারটি কোয়ার্টারে ভাগ করুন। সমান ভাবেই ভাগ করতে হবে তা নয়। কেননা প্রতিটা বিজনেসেই কিছু সিজন থাকে। আবার শুরুতে রিটার্ন কম থাকবে। তাই এই অংশগুলোকে ভেবে আপনাকে ডিসাইড করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে আপনার শেষ কোয়ার্টারে বেশি রেভিনিউ জেনারেট করবে। বাংলাদেশের মার্কেটে ঈদের সময়গুলোতে বেশি রেভিনিউ আসে। তাই পুরো গোল
টাকে চার ভাগে ভাগ করলেও এটি মাথায় রাখতে হবে।
৩. গোলটাকে অ্যাচিভ করার প্ল্যান তৈরি করুন
এবার এই পুরো প্রসেস যেটা আপনার মাথারা মধ্যে আছে, তা মাথা থেকে বের করুন। কোথাও লিখে ফেলুন। এটা কাগজ কলম হতে পারে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল হতে পারে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
টুলের জন্য বেস্ট হচ্ছে আসানা। আবার যদি ম্যাপ আকারে ব্রেইন স্টর্ম করতে চান, তাহলে মাইন্ড মিস্টার ।
৪. প্রতি কোয়ার্টারের জন্য অ্যাকশন প্ল্যান রেডি করুন
এবার প্রতি কোয়ার্টারের শুরুতে আপনি সেই কোয়ার্টারের অ্যাকশন প্ল্যান রেডি
করে ফেলুন। এটাকে মাস
এবং সাপ্তাহিক হিসেবে রেডি করুন। আপনার চোখের সামনে আসলে পুরো প্রসেসটা থাকতে হবে, কোন
মাসে কতটুকু অ্যাচিভ করতে চাই, এবং সেই অনুযায়ি কাজ করে যেতে হবে।
বছরের যে কোনো সময় যে কোনো কারণে পরিকল্পনা মোডিফাই করা লাগতে পারে, তাই যেটা আমরা তৈরি করেছি, তা ইনিশিয়াল পরিকল্পনা। নাম্বার যেটা সেট করেছি, সেটা ফিক্সড। এই নাম্বার আমাদেরকে বলবে আমরা কতটুকু অ্যাচিভ করতে পেরেছি। এটা কম হতে পারে আবার ওভার অ্যাচিভড হতে পারে। এবার আপনার হাতে পুরো প্ল্যানটা আছে, শুধু কাজে নেমে পরতে হবে।
লেখক পরিচিতি:
নাহিদ হাসান
ইন্টারনেট মার্কেটার এবং উদ্যোক্তা
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মাইক্রোসফট অফিস স্পেশালিস্ট (M.. বিস্তারিত
মুস্তাকিম আহমেদ বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত