English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

প্রকাশঃ ২০২০-১২-০৫ ১২:২২:৫৮
আপডেটঃ ২০২৫-০৬-২২ ১০:১৬:১৮


প্রশান্তির খোঁজে: দি আর্ট অফ কাইজেন

প্রশান্তির খোঁজে: দি আর্ট অফ কাইজেন


গোলাম রহমান


রবিন এস. শর্মার লেখা দি ম্যান হু সোল্ড হিজ ফেরারি বইয়ের চরিত্র জুলিয়ান। কানাডার একজন বিখ্যাত আইনজীবী জুলিয়ান, যিনি মহাব্যস্ত তার কাজ নিয়ে, দম ফেলার সময় নেই। অনেক প্রাচুর্য থাকার পরেও তার জীবনে শান্তি নেই। প্রশান্তির খোঁজে তিনি ভারতে এলেন। সেখানে তার সাথে একজন আত্মিক সাধকের সাথে সাক্ষাৎ হলো। সেই সাধক তাকে যেসব উপদেশ দিয়েছেন সেগুলো থেকে সারমর্ম হিসেবে এই লেখাটি তৈরি হয়েছে। পাঠকের সুবিধার জন্য বাস্তব কিছু উদাহরণ যোগ করা হয়েছে।

 

প্রথম সূত্র: মৌনতার স্বাদ নেয়া

বিষয়টিকে আমরা এভাবে বলতে পারি, সারাদিন কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের চিন্তা/ মন বিক্ষিপ্ত থাকে। মানুষের মন হলো লেকের মতো। লেকে যখন ঢেউ থাকে সেখানে আমরা কিছু দেখতে পাই না। লেকের পানি যখন কোনো পাত্রে রাখি তখন স্থির থাকে তখন সেখানে একটি ছোট্ট পাথর ফেললেও তা তরঙ্গের সৃষ্টি করবে। মৌনতার জন্য আপনি ১০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বেছে নিতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার বাসার যে কোনো একটি নির্জন স্থান। সময়টা নির্দিষ্ট হলে আপনার শরীর মনে তা কন্ডিশনিং হয়ে যাবে। অর্থাৎ ভালো ফলাফল দেবে। এটা আপনাকে অন্তরের সুখকে জাগ্রত করবে এবং আপনি শারীরিকভাবে ভালো বোধ করবেন। আপনার আপন সত্তার সাথে যোগাযোগ ঘটাতে এটা খুব কার্যকরী। এটা আপনাকে প্রকৃতির অপার সম্ভাবনার সাথে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেবে। আপনার শক্তিকে নবায়ন করবে, আপনার ঘুম ভালো হবে এবং কর্মোদ্দীপনা বাড়াবে। আপনার আশপাশের মানুষদের কাছে আপনি শান্ত স্থির হিসেবে পরিগণিত হবেন।

 

দ্বিতীয় সূত্র: দেহের যতœ নেয়া

আপনি আপনার দেহের যতœ নিচ্ছেন মানে আপনার মনের যতœ নিচ্ছেন। প্রতিদিন ব্যায়াম করে আমরা দেহের যতœ নিতে পারি। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। প্রতি সপ্তাহে ১৬৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অন্তত পাঁচ ঘণ্টা কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম করতে পারি। যোগ ব্যায়াম হতে পারে আপনার প্রতিদিনের শুরু করার কাজ যা আপনাকে সারাদিন কর্মচঞ্চল রাখবে। প্রকৃতির মাঝে, বন জঙ্গলে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে সুদৃঢ় করে। আরেকটি চর্চা আমরা করতে পারি, দম চর্চা। আমরা আমাদের পুরোটুকু দম কখনই নিই না। দম চর্চা অভ্যাস করার ফলে আমরা বেশি পরিমাণ অক্সিজেন নিই যা আমাদের এনার্জি লেভেল ধরে রাখতে সহায়তা করে। আমরা দিনে কয়েকবার এটা করতে পারি। নাক দিয়ে এমনভাবে দম নেব যাতে আমাদের পেট ফুলে এবং মুখ দিয়ে দম ছেড়ে দেব। পরপর কুড়ি বার করলে এক দফা। প্রতিদিন এরকম কয়েক দফা করলে আপনি অনেক প্রফুল্ল থাকবেন।

 

তৃতীয় সূত্র: প্রাণ প্রাচুর্যের পরিচর্চা করা

আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ জাঙ্ক ফুড গ্রহণ করি তাতে শারীরিক মানসিক শক্তির অপচয় ঘটে। এখানে জীবন্ত খাবারের কথা বলা হয়েছে। জীবন্ত খাবার বলতে যেসব খাদ্য উপাদান সরাসরি আলো, বাতাস পানি সংস্পর্শে বেড়ে ওঠে সেগুলোর কথা বলা হয়েছে। এখানে মুলত ভেজিটেরিয়ান ডায়েটের কথা বলা হয়েছে। প্রচুর পরিমাণ শাক, সবজি, ফল, সালাদ এবং শস্য উপাদান খেতে হবে।

পূর্ব চায়নার ওকিনাওয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের ওপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে তারা মূলত ভেজিটেরিয়ান। তাদের দীর্ঘ আয়ুর প্রধান কারণ তারা নিরামিষভোজী। মানুষের চেয়ে কুড়িগুণ শক্তিশালী গরিলা বা বিশালাকার হাতি কিন্তু নিরামিষভোজী। মাংস খেতে পারি, সেটা জীবন্ত খাদ্য উপাদান না, আর মাংস হজম করতে আমাদের পরিপাক যন্ত্রের অনেক শক্তি ব্যয় হয়। ফিনল্যান্ডে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে তুলনামূলক ভাবে শতকরা আটত্রিশ ভাগ নিরামিষভোজীরা কম দুর্বল অনুভব করছেন, মাত্র সাত মাস নিরামিষ খাওয়ার ফলে তাদের এই উন্নতি হয়েছে।

 

চতুর্থ সূত্র : পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করা

পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করা মানে সারা জীবনের জন্য ছাত্রের খাতায় নাম লেখানো। প্রতিদিন পড়া, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বই পড়া। সব ধরনের বই পড়ে আমরা লাভবান হব না। কিছু বই ঘেঁটে দেখতে পারি, কিছু বই থেকে আমরা নিতে পারি। আর কিছু বই আমরা আত্মস্থ করতে পারি। আমরা জীবনের চলার পথে যেসব বাঁধা বা সমস্যার মুখোমুখি হই, তার প্রতিটি সমস্যা আমাদের আগে কেউ না কেউ মোকাবিলা করে গিয়েছেন। তাদের সেই অভিজ্ঞতা কোথাও না কোথাও লিখে রেখে গিয়েছেন। তাদের সেই উপায়সমূহ আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করলে সহজেই সেই সকল বাঁধা মোকাবিলা করতে পারবো।

কয়েকটি বইয়ের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, মহাত্মা গান্ধীর দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিন্স উইথ ট্রুথ, হারমান হেস-এর সিদ্ধার্থ, নেপোলিয়ন হিল-এর থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ, পাওলো কোয়েলহো- দি অ্যালকেমিস্ট ইত্যাদি।

 

পঞ্চম সূত্র : আত্মপর্যালোচনা করা

সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর আমরা একটি নীরব মুহূর্ত বেছে নিতে পারি। আত্মপর্যালোচোনা মানে চিন্তা করা। সাধারণত মানুষ বেঁচে থাকার জন্য চিন্তা করে। এখানে যে চিন্তার কথা বলা হয়েছে তা নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য। কীভাবে শুরু করা যায়? সকাল থেকে আমরা সারাদিন কী কী করেছি তার তালিকা করে সেগুলোর মধ্যে কোনটিতে আরো ভালো করার সুযোগ ছিল সেটা ঝালিয়ে নিতে পারি। যেমন পথে, বাসে বা অফিসে তুচ্ছ কারণে কারো সাথে খারাপ আচরণ করেছি কি না? অর্থাৎ যেটা করেছি তার চেয়েও ভালো করার সুযোগ ছিল কিনা। উদাহরণ, বাসে কন্ডাক্টর ভাড়া চাইলে অনেকেই ঝাড়ি মেরে বলে, ‘এই ব্যাটা, এই মাত্র উঠলাম, পালিয়ে যাচ্ছি নাকি?’ পরিবর্তে নির্ধারিত গন্তব্যের ভাড়াটা শোধ করলেই ল্যাটা চুকে যায়, অহেতুক কথা বলে অন্যকে কষ্ট দেয়া থেকে আমরা বিরত থাকতে পারি। 

সারাদিন আমি কী ভালো আর কী কম ভালো (খারাপ বা আরো ভালো করতে পারতাম) তার তালিকা তৈরি করা। আমরা আমাদের ভুলকে জাস্টিফায়েড বা সঠিক হিসেবে ্রপ্রতিপন্ন করতে চাই। কেউ বললেও সহজে নিজের ভুল স্বীকার করতে চাই না। ভুল করাটা স্বাভাবিক, তবে একই ভুল বারবার করাটা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই না।

সেজন্যই আত্মমূল্যায়নের মধ্য দিয়ে নিজেকে নিজের আয়নায় দেখতে পারি। যেসব ভুল সহজেই শোধরানো যায় সেটা আমরা শুধরে নিতে পারি। এটাকে আমরা প্রতিদিনের অভ্যাস পরিণত করলে দিনে দিনে আমাদের ভুল করার পরিমাণ কমতে থাকবে এবং আমরা অনন্য মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাব।

 

ষষ্ঠ সূত্র : তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে উঠা

আমরা সাধারণত প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ঘুমাই। গড়ে ছয় ঘণ্টা ঘুমালেই আমরা স্বাভাবিকভাবে কর্মক্ষম থাকতে পারি। ঘুম অন্য সব অভ্যাসের মতোই। এটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। যারা দেরি করে বিছানায় যাওয়া এবং উঠাকে কষ্টকর মনে করেন, তাদের জন্য বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং, তবে কয়েক দিনের চেষ্টায় সফলতা আসবে। শুরুতে ভালো লাগবে না। তবে ক্রমশ শরীর নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আমাদের অনেকের কাছেই সকালের সূর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য হয় না। কিন্তু সুর্যালোকের সাথে আমাদের শরীর মনের একটা দারুণ সংযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রে আমরা মনে করতে পারি, ঘুমের পরিমাণ নয়, ঘুমের মানের দিকে আমরা খেয়াল রাখতে পারি। ভালো ঘুম হলে আমাদের প্রতিদিনের যে শারীরিক ক্লান্তি এবং অবসাদ কেটে গিয়ে কর্মোদ্দীপনা পাই। যেমন ধরুন রাত আটটার আগেই আমরা রাতের আহার সেরে নিতে পারি। তাতে বিপাক ক্রিয়া ভালো হওয়ার কারণে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত হবে না। ঘুমানোর আগে আমরা কারো সাথে অপ্রয়োজনীয় কুতর্ক পরিহার করতে পারি। খবর দেখা থেকে বিরত থাকতে পারি। হারবাল চা পান করতে পারি এবং মৃদু সঙ্গীত শুনতে পারি। ঘুম যত ভালো হবে তার পরিমাণ তত কম লাগবে। এক্ষেত্রে আমরা প্রাচীন একুশ দিনের নিয়ম পালন করতে পারি। অর্থাৎ যে কোনো কাজ টানা একুশ দিন করলে সেটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

বিছানা ত্যাগের দশ মিনিট পূর্বে আমরা সারাদিনের কাজের পরিকল্পনা এবং পর্যালোচোনা করে নিতে পারি। ঘুম থেকে জেগে আমরা ¯্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি। কারণ কয়েক লক্ষ মানুষ আজকের সুর্যোদয় দেখার আগেই পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছেন। আমি সৌভাগ্যবান কারণ এখনো দম নিতে পারছি। কৃতজ্ঞতার আনন্দে আমরা হাসতে পারি। একা একা আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে হাসুন। সারাদিন আপনার ভালো যাবে একটি চার বছরের বাচ্চা দিনে তিনশ বার হাসে। আর একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ কি দিনে পঞ্চাশ বার হাসে? মনে হয় না। আমরা সুখের জন্য হাসব না, আমরা সুখী সেজন্য নির্মল ভাবে হাসব। আপনার কী মনে আছে কতদিন আগে কারো দিকে তাকিয়ে মমতাপূর্ণ হাসি দিয়েছেন?

 

সকালে কিছুটা যোগ ব্যায়াম করতে পারি আর সাথে তাজা ফলের রস বা ডাবের পানি হলে অনন্য। দেখবেন সারাদিন আপনি প্রচুর এনার্জি পাচ্ছেন।

আর যদি এমনটা ভাবতে পারেন, আজকের দিনটি আমার জীবনের শেষ দিন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আমার কী কী কাজ করণীয়, অর্থাৎ মৃত্যুর আগে আমি কী কী করে যেতে চাই। অথবা, ধরুন আমার জীবন ছবির বাস্তবায়নের জন্য কী কী কাজ করা উচিত। তাহলে আপনি দিনটিকে আরো কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ সারাদিনের একটি পরিকল্পনা আপনার মাথায় চলে আসবে। তাহলে আর দেরি কেন? চলুন কাল থেকেই শুরু করে দিই।

 

সপ্তম সূত্র: সংঙ্গীত শোনা

সুর্যালোক যেমন আমাদের ইতিবাচক ভাইব্রেশন দেয় তেমনি সঙ্গীত আমাদেরকে উদ্দীপ্ত করে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও। সেটা হতে পারে সকালে, সন্ধ্যায়, রাস্তায় বা বাসে। যখন আপনার মন খারাপ থাকে বা কম ভালো লাগে তখন আপনার একটি পছন্দের গান ছেড়ে দিতে পারেন। তবে গানটা ইতিবাচক হওয়া ভালো। আপনার পছন্দের গান হলে তো কথাই নেই। তাছাড়া হিলিং মিউজিক (অধিকাংশই ইন্সট্রুমেন্টাল) শুনতে পারেন। সকাল দুপুর বা রাতের জন্য আলাদা আলাদা হিলিং মিউজিক রয়েছে। চাইলে শুধুই ইন্সস্ট্রুমেন্ট শুনতে পারেন। সেটা আপনাকে মুহূর্তে চাঙ্গা করবে নিঃসন্দেহে। 

 

অষ্টম সূত্র : অটোসাজেশন

মুখের কথার প্রভাব (উচ্চারিত শব্দের প্রভাব) এটাকে অটোসাজেশন বা মন্ত্র বলা যেতে পারে। সংস্কৃতে মন্ত্র     (মন + ত্রা = মুক্ত করা) যেটা আমদের মনকে মুক্ত করে। একই কথা বারবার উচ্চারণ করলে আমাদের অবচেতনে সেটা প্রোথিত হয় এবং মস্তিষ্ক সেদিকে ধাবিত হয়। ধরুন কেউ যদি বার বার উচ্চারণ করে, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী, আমি নির্ভীক, আমি সাহসীতাহলে তার ভয় সংকোচ কেটে যাবে, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। অটোসাজেশন আপনার মনের চেতন বলয়ের সাথে অবচেতন বলয়ের সংযোগ ঘটায়। আর অবচেতন মন ভালো মন্দের ভেদ বুঝতে পারে না। আপনি তাকে যে প্রোগ্রাম দেবেন সে আপনাকে সেদিকে নিয়ে যাবে। ধরুন কেউ যদি বলেন, ‘আমার পোড়া কপাল, আমার পোড়া কপালতাহলে তার কপাল পুড়বে। অর্থাৎ তিনি দিনে দিনে নেতিবাচকতার দিকে ধাবিত হবেন। ধরুন আপনি প্রতিদিন যদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি আমারই মতো সুন্দর, আমি অনন্যদেখবে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। মন্ত্র ইতিবাচক হওয়া বাঞ্চনীয়।

 

নবম সূত্র: অনন্য মানুষ হওয়া

চারিত্রিক দৃঢ়তা, অধ্যবসায়, সমমর্মিতা, বিনয়, সবর, সততা এবং সাহস। এইসব উপাদান যখন আপনার চরিত্রে প্রোথিত হবে তখন আপনি এক ধরনের আত্মিক গভীরতা এবং প্রশান্তি অনুভব করবেন। আধ্যাত্মিক সাফল্যের জন্য সকল উপাদান দরকার। আত্মশক্তি জাগ্রত হলেই তখন আপনি প্রকৃতির সাথে একাত্মতা অনুভব করবেন। এটা অনন্য মানুষে পরিণত হওয়ার প্রথম ধাপ। আপনি যেমন চিন্তা করবেন তেমন ফল পাবেন, যেমন কাজ করবেন তেমন অভ্যাস রচিত হবে। আর অভ্যাস একসময় আপনার চরিত্রের অংশ হয়ে যাবে।

সততার সাথে পথ চললে, নিজের আত্মাকে অনুসরণ করলে অনন্য মানুষে পরিণত হওয়া সহজ। এটা না করতে পারলে সত্যিকার সুখ সব সময় অধরা থেকে যাবে। এটা অর্জন করতে হলে আগের যে আটটি অভ্যাসের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর নিয়মিত চর্চা নিয়মিত। সবচেয়ে ভালো হয় একজন শিক্ষকের অধীনে চর্চা করলে। কারণ শারীরিক সমস্যার জন্য আমরা যেমন ডাক্তারের শরণাপন্ন হই, তেমনি আত্মিক মুক্তির জন্য একজন আত্মিক গুরুর কাছে যাওয়াটা বাঞ্চনীয়। তিনি আপনাকে পথ দেখাতে পারবেন।

অনন্য মানুষরা প্রোঅ্যাকটিভ হয়ে থাকেন, তারা বাইরের কোনো কিছু দ্বারা প্রভাবিত হন না। বরঞ্চ অন্যদের প্রভাবিত করেন। যুগ যুগ ধরে যেসব ওলি, বুজুর্গ, নবী, রাসুল মহামানবরা এসেছিলেন তারা সকলেই ছিলেন সুপার  প্রোঅ্যাকটিভ।

 

দশম সূত্র: অতি সাধারণ জীবনযাপন করা

সাধারণ জীবনযাপনকে আমরা শোকরগোজার জীবনযাপন বলতে পারি। কী নাই সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে আমাদের কী আছে সেদিকে মনোযোগ দিতে পারি। আমাদের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারলে প্রশাস্তি অনেক বেড়ে যাবে। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের অঢেল আছে কিন্তু কিছুই ভোগ করতে পারে না। ক্ষেত্রে আমেরিকার ধনকুবের ফোর্ড মোটর কোম্পানির মালিক হেনরি ফোর্ডের কথা বলতে পারি। তিনি কিছুই খেয়ে হজম করতে পারতেন না। তার খাবার ছিল মাতৃদুগ্ধ। একবার এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার গত কয়েক মাসের স্মরণীয় ঘটনা কী। তিনি অকপটে বলেছিলেন, কিছুদিন আগে তিনি একটি অর্ধসিদ্ধ ডিমের এক তৃতীয়াংশ খেয়ে হজম করতে পেরেছিলেন।

সম্পদ অর্জনের প্রতিযোগিতা আমাদের টেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন নিজের দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় থাকে না। একটি সময় আমরা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরি। অনেকটা জুয়ারির মতো, আরেকটা দান খেলেই (জেতার আশায়) জুয়ার টেবিল থেকে উঠবে। জেতাও হয় না আর জুয়া থেকেও সে পরিত্রাণ পায় না।

 

কীভাবে আমরা সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হতে পারি। ব্র্যান্ডের জিনিসের প্রতি আসক্ত না হওয়া, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটা না করা। অপ্রয়োজনীয় ফোনালাপ পরিহার করা। বেঁচে যাওয়া সময়সহ পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া।



ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা,


গোলাম রহমান

গ্রিন বিল্ডিং কনসালটেন্ট, অনুবাদক



আরো পড়ুন