English
ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

প্রকাশঃ ২০২০-১১-১৩ ০০:২৮:৩১
আপডেটঃ ২০২৫-০৫-০৯ ২৩:৩১:১২


কোম্পানির আয়কর রিটার্ন ও অডিট রিপোর্ট

কোম্পানির আয়কর রিটার্ন ও অডিট রিপোর্ট


জসীম উদ্দিন রাসেল

 

আয়কর রিটার্নের সাথে কোনো করদাতা যদি ভুয়া বা মিথ্যা অডিট রিপোর্ট দাখিল করেন তাহলে উক্ত করদাতাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারে। এছাড়াও তিন মাস থেকে তিন বছর কারাবাস দেয়ার আইন রয়েছে।

সম্প্রতি জানা যায়, ৩৫ হাজার কোম্পানি রিটার্ন দাখিল করেছে কিন্তু এর মধ্যে ১৭ হাজার অডিট রিপোর্ট সাইন করেছে অডিট ফার্ম। তাহলে বাকি ১৮ হাজার অডিট রিপোর্ট কে সাইন করেছে?

আইন আছে কিন্তু তারপরও ভূয়া বা মিথ্যা অডিট রিপোর্ট দাখিল প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এই অনিয়ম যাতে রোধ করা যায় সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দি ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি) যৌথভাবে একটি অনলাইন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম অডিট করবে তারা আইসিএবি ওয়েবসাইট থেকে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ইউনিক কোড পাবে। যখন অডিট রিপোর্ট সাইন করবে তখন তাদেরকে এই কোডটি উল্লেখ করতে হবে। কোম্পানি আয়কর রিটার্নসহ অডিট রিপোর্ট দাখিল করার পর আয়কর কর্মকর্তা সেই নাম্বার দিয়ে আইসিএবি ওয়েবসাইটে লগ ইন করে আসল অডিটর সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। এভাবে ভুয়া বা মিথ্যা অডিট রিপোর্ট বন্ধ করার চিন্তাভাবনা চলছে।

এই পদ্ধতি কিছুটা কাজে আসবে। কিন্তু বড় ধরনের পরিবর্তন এর মাধ্যমে আসার সম্ভাবনা কম। কারণ, কোম্পানি যদি অডিট ফার্মের কাছে যায় তাহলে অডিট হলো এবং সেই কোম্পানি যখন অডিট রিপোর্ট ট্যাক্স সার্কেল-এ রিটার্নের সাথে দাখিল করবে তখন তা সঠিক কিনা তা যাচাই করা যাবে। কিন্তু যদি কোনো কোম্পানি অডিট না করায় এবং রিটার্নও দাখিল না করে তাহলে তাদের তথ্য আইসিএবি অনলাইন পোর্টালে থাকবে না। এবং এখান থেকে তাদের বের করাও সম্ভব হবে না।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি)। তাদের হিসেব মতে, জুলাই ২০২০ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার কোম্পানি তাদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। আর এনবিআর-এর একটি টাস্কফোর্স এর তথ্য মতে ৭৮ হাজার কোম্পানি টিআইএন নিয়েছে।

আয়কর আইন অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। কিন্তু তার আগে টিআইএন নিতে হয়। কারন, টিআইএন ছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায় না। তাহলে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৭৮ হাজার কোম্পানি টিআইএন নিলো। বাকি প্রায় এক লাখ কোম্পানি টিআইএন নেয়নি। এটা দেখার দায়িত্ব কার?

আইন অনুযায়ী ১ লাখ ৭৬ হাজার কোম্পানিরই অডিট ফার্ম থেকে অডিট করিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার কথা এবং তাদের কাছ থেকে প্রতি বছর এনবিআর-এর আয়কর পাওয়ার কথা। তবে শুধু এনবিআর না, আরজেএসসি-তেও প্রতি বছর রিটার্ন ফাইল করতে হয় এবং তাদেরও আয় হওয়ার কথা।

তাই আইসিএবি-র পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং আরজেএসসিকেও দায়িত্ব নিতে হবে। একটা কোম্পানি শুরু হয় আরজেএসসি থেকে এবং প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন ফাইল করতে হয়। এখন আরজেএসসি যেহেতু একটা কোম্পানিকে তার সব তথ্য যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন দেয়, তাই এই প্রতিষ্ঠানের দ্বারাই সম্ভব অডিট রিপোর্ট সঠিক কি না তা যাচাই করা। কারণ, কোম্পানি আইন অনুযায়ী অডিটর নিয়োগ দিতে হয় এবং অডিটর নিয়োগের ত্রিশ দিনের মধ্যে আরজেএসসিকে জানাতে হয়।

তাই একটা কোম্পানির অডিটর কোন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম তা আরজেএসসি জানে এবং অডিট হওয়ার পর তারাই মিলিয়ে দেখতে পারবে প্রকৃতই নিয়োগকৃত অডিট ফার্ম অডিট করেছে কিনা।

কোম্পানি যখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করবে তখন আয়কর কর্মকর্তা আরজেএসসি ওয়েবসাইটে লগ ইন করে যাচাই করে নিবে। এর মাধ্যমে অডিট রিপোর্ট সঠিক হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে যখন লোন নিবে তখন ব্যাংকও আরজেএসসি থেকে অডিট রিপোর্ট যাচাই করে নিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিতে পারে।

প্রায়ই একটি অভিযোগ  শোনা যায়, কোম্পানি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজে কয়েক ধরনের অডিট রিপোর্ট দিয়ে থাকে। একটি কোম্পানি একটি অর্থ বছরের জন্য একটি অডিট রিপোর্টই নিতে পারবে। আইন অনুযায়ী বেশি নেওয়ার সুযোগ নাই।

আয়কর কম দেওয়ার জন্য কোম্পানি মুনাফা কমিয়ে দেখায় বা ক্ষতি দেখিয়ে থাকে। আবার একই কোম্পানি যখন ব্যাংকে লোনের জন্য যায় তখন আবার সম্পদ এবং মুনাফার পরিমাণ বেশি দেখিয়ে থাকে যাতে করে লোন পেতে সুবিধা হয়। দুই ক্ষেত্রেই সঠিক আর্থিক চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। এবং এর ফলে একদিকে সরকার রেভিনিউ হারাচ্ছে আবার অন্যদিকে ব্যাংকের লোন কুঋণ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর নাজুক অবস্থা হচ্ছে। যদিও অভিযোগ আছে ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

যখন একটা জায়গায় সঠিক তথ্য থাকবে এবং সেখান থেকে যখন ব্যাংক, আয়কর কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অডিট রিপোর্ট পাবে তখন ভুয়া বা মিথ্যা অডিট রিপোর্ট কোথাও দাখিল করার কথা শোনা যাবে না।

সরকারের আয় বাড়ানোর জন্য এনবিআর টাস্কফোর্স গঠন করে যতোগুলো সক্রিয় কোম্পানি রয়েছে তাদেরকে রিটার্ন দাখিল করানোর কথা শোনা যাচ্ছে। এর সাথে যদি আরজেএসসিও উদ্যোগী হয় তাহলে এই কাজ আরো অনেক সহজ হবে। এবং এর সাথে আরজেএসসির আয় তথা সরকারের আয় বাড়বে।

কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়া রেখে কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে কোম্পানির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। শুধু কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করলে সুফল আসবে না। রেজিস্ট্রেশন পরবর্তী সময়ে সময়ে যে রিটার্ন দাখিল করতে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন সঠিক তথ্য নিশ্চিত হবে তেমনি অন্যদিকে সরকারের আয়ও বাড়বে।

   

         

 


ক্যাটেগরিঃ অর্থনীতি,


জসীম উদ্দিন রাসেল

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও লিড ট্যাক্স কনসালট্যান্ট, ট্যাক্সপার্ট



আরো পড়ুন