রুবাইয়াত হাসান সিরাজ
পূব আকাশের সাদা ধবধবে ফেনার মত মেঘ দেখে দিয়া হতবাক হয়। এত সাদা হও কী করে তুমি? কী অপূর্ব রঙ তোমার! আহা আমি যদি তোমার ফেনায় গলে যেতে পারতাম! পাশের বাসার মিলির মতন আমাকেও মানুষ বলতো, কী সুন্দর তুমি দিয়া!
আমি দিয়া। আমি কালো। কী পড়ি, কোথায় থাকি? গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি কালো, আমি আলোর বিপরীত; তাই আমার পরিচয়। সমাজ আমাকে বলেছে, আমি কালো, তাই আমি কালো। মা আমার বলেছে, দিয়া তুই আমার কালো মেয়ে। তোকে যে কে বিয়ে করবে!
বাবা একটু সঙ্কোচে তার বন্ধুদের বলেন, ‘মেয়েটা আমার ভালোই জানেন, শুধু রংটা খানিক চাপা’।
মিলির সাথে বের হলেই পৃথিবী বলে, পরীর সখী কালো কেন গো? আমার চারপাশের রঙ যাই দেখিনা কেন, সবই কালো। রঙ সাদাকারী ক্রিম মেখেও মনের অন্তরাল দ্বিধায় কাটে। সাদা তুমি কোথায়? এতদিন পর এই বদ্ধ ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে
দেখলাম সাদা। আহারে! সাদা!
কতজন দিয়া আমার পাশে? শত, হাজার, লাখ নাকি কোটি? মনের অন্তরালে যে ঝড় কেড়ে নেয় বাস্তবতা, তা কেউ দেখে না কি শুনতে পায়? যে মানুষ তার প্রভুর আলো নিয়ে এই ত্রিভুবনে পা দিল,
সেই মানুষটি শুধু তার গাত্রবর্ণের জন্যে তিলে তিলে নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলোধুনো করতে পারে?
বাস্তবতা হল পারে। কারণ আমরা সামাজিক প্রাণী। মানুষের রুচিতে আমাদের ভালো লাগার পরিমাপ। অন্যের কথায় আমাদের মন হাসে আবার কাঁদেও। কারণ আমরা বাঁচি অন্যের চোখে। আমরা জিতে যাই অন্যের হারে। আমরা অন্যের হতাশায় নিজেকে আড়াল করি। ভাবি, যাক্গে আমি তো ভালো; তাতেই সব আলো! আমি কালো কারণ আমি কালোর জগতকেই দেখি আমার পাশে। হীনমন্য হতে হতে হারিয়ে ফেলি নিজেকে। ভাবি, সব রাজ্য সাদাবাসীর।
কে শেখাল কালো তুমি অন্ধকার? কে বললো, কালো তুমি নিভে যাবার পতাকা? কে দেখালো, কালো মানে পরাজয়, নিকৃষ্ট, ফেলে দেবার অজুহাত? আমি মানুষ। আমার পরিচয় আমি মানুষ। আমার পরিচয় কী আমার রঙ; যা নিয়ে আমার করার কিছুই নেই?
আমার পরিচয় কি আমার গুণ নয়?
আমার পরিচয় কি আমার কাজ নয়?
আমার পরিচয় কি আমার অবদান নয়?
মানব শ্রেষ্ঠ রসূল(স) বিদায় হজ্জে বলে গেলেন, ‘মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই, সাদার উপর কালোর বা কালোর উপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। হাজার বছর পেরিয়ে চারপাশে কোন সত্য বিরাজ করে আজ?
আমি সাদা। হ্যাঁ আমি সাদা। চাকচিক্যে ভরা দুনিয়ায়, মিথ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাকে কালো বললেও আমার ভেতর সাদা। আমি মানুষকে ভালোবাসি। অন্যের পরাজয়ে আমার হৃদয় কাঁদে।
অন্যের প্রাপ্তি আমায় আনন্দ দেয়। কারো বিপদে যতটুকু সাধ্যে কুলোয়, এগিয়ে যাই চাওয়া-পাওয়ার অবান্তর হিসেব না মিলিয়ে। আমি গান গাই, আমি আঁকি, আমি হাসি, আমি এগিয়ে যাই সাদা মনে। অথচ পাশের মানুষটি যখন বুঝতে চায়না তখন সব কালো মনে হয়। বাবা-মায়ের জন্যে যখন কিছু একটা করতে পারি তখন সব সাদা যেন! আমার হাসিটা কিন্তু সাদা।
‘দিয়া, মা আর হাসবি না খিলখিল করে। তোর কালো বর্ণে কি সাদা হাসি মানায়?’
দুনিয়া কিন্তু বিভ্রান্ত। দুনিয়ার সংজ্ঞায় কালো শুধুই কালো। কালোর বেঁচে থাকার অধিকার নির্ধারণ করে সাদা। #Black life
matters বলে চিৎকার করতে হয় কালোর অস্তিত্ব রক্ষায়। আমি সাদা
আবার আমিই কালো। আমি সাদা-কালো। ভেতর কালো তো কী হয়েছে, সাদা রঙ্গে রঙ্গিন হলেই আমার চিত্ত পুলকিত? আমার সমাজেই, যে মা গর্ভে ধরলো তাকে টুকরো টুকরো করতেও বুক কাঁপে না খোকার। কে কালো মা না কি সন্তান? যে জমিতে মাকে শেষ করে দিয়ে এলো; তার আসমান কি তখন সাদা ছিল না কালো? খোকা বলতে পারবে বোধহয়। আচ্ছা যে নারী তার সব দিয়েও, শেষটুকু দিয়েও সম্মান রাখতে পারলো না, তখন সাদা কে ছিল? মানুষরূপী পশু না কি ঐ নারী? তার আর্তচিৎকার কানে গেল না
কারো? তাদের কেউ নিভৃতে সহ্য করলো অন্ধকার, কেউ কালো দগদগে সাজা নিয়ে পেল না রক্ষা । আর কেউ না পেরে আত্মহননের পথে শেষ হল।
আমি দিয়া, আমি রুপা, আমি তনু; আমার সম্মান কি সাদা না
কালো? ঐ দেখ, আমার সমাজ বাঁকা ঠোঁটে হাসে। আচ্ছা, অর্থ সে কি সাদা না কালো? কালো সাদা হয় আর সাদা চকচকে নোট কেমন করে যেন কালো হয়! বেশ গোলমেলে বাঁধে দিয়ার। আচ্ছা, যে নারী
কালোর দাগ নিয়ে সংসার করলো সে যখন বউমা খোঁজে, তখন তা কেবলই সাদার দরবারে কেন? পুরুষ খোঁজে সাদার ভেতর সাদা মন! প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের সাদা আর কালোর দ্বৈরথ থামবে কি
করে? দিয়া কিছুটা অশান্ত হয়েই ছাদে পা বাড়ায়।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচলে চোখ পড়তেই স্মিত হাসে দিয়া। সাদা-কালো আঁচলের শাড়িটা যে সদ্য কেনা। বুক ভরে দম নিয়ে চোখ বুজে সে। খানিকটা নির্ভার অনুভব করতেই সশব্দে
পশ্চিমা আকাশ জানান দেয় ঝড় আসন্ন। বাহ! মেঘগুলোতো বেশ কালচে, দেখতে দেখতেই অবাক হয় সে। সাদা-কালো সহ অবস্থান করে প্রকৃতিতে। অথচ তাদের নেই কোন বিরোধ। আসল সাদা আসন নেয় মনে। আসল কালো সে অবসন্ন করে সাদা মনকে। আর রঙ? সে তো নির্বিবাদী। কালো! সে কিন্তু রাতের সৌন্দর্য, আর সাদা? সে না থাকলে কালোর রূপ জানবো কি করে? দিয়া হাসতে থাকে খিল খিল করে।
দূর থেকে মিলি তাকে দেখে ভাবে, কি সুন্দর তুমি দিয়া!
লেখক পরিচিতি:
রুবাইয়াত হাসান সিরাজ
প্রধান নির্বাহী, গ্রাফাইট
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
মাইক্রোসফট অফিস স্পেশালিস্ট (M.. বিস্তারিত
মুস্তাকিম আহমেদ বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত