English
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশঃ ২০২১-১২-১২ ২৩:৪৯:১৪
আপডেটঃ ২০২৪-০৩-২৫ ০৮:৫৩:৫১


মায়ের গায়ে পতাকা

মায়ের গায়ে পতাকা


রাশেদ জামান

 

বিজয় দিবসের বিকেলে দলবল নিয়ে বাড়ির ছাদে গিয়েছিলাম বাংলাদেশের পতাকা উড়াতে সবার হাতে নানা সাইজের পতাকা

আমার মা কালেভদ্রে ছাদে ওঠেন অবাক হয়ে হঠাৎ দেখি আম্মা সবচাইতে বড় মাপের পতাকাটা শাড়ির মতো গায়ে জড়িয়ে ঘোমটা দিয়ে ছাদে এসে হাজির সদাহাস্য আমার মায়ের মুখে এতটা বিশাল বিস্তৃত হাসি অনেকদিন দেখি নি


এই হাসি কি বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালনে, না বিদেশ থেকে আগত নাতি-নাতনি পরিবারকে বহুবছর পর দেখার আনন্দে, না প্যানডেমিককে মোটামুটিভাবে পাশ কাটাবার পর পৃথিবীর সবচাইতে বায়ুদূষিত রাজধানীর কোনো বাড়ির ছাদে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারার সক্ষমতায়- জানি না

সে মুহূর্তে খুব মাথা খাটিয়ে জানবার ইচ্ছাও হলো না কংক্রিটে ঢেকে দেয়া ঢাকা শহরে মাথা তুলে আজকাল বেশি কিছু জানবার ইচ্ছাও করে না

 

আমার নানার মুখে গল্প শুনেছি , ১৯৭১- তিনি কী করে তার সদ্যবিবাহিত কিশোরী কন্যাকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিলেন পাক হানাদার বাহিনীর চেকপোস্টে, বোরকার ভেতর শাড়ির আঁচলের নিচে রেডিও লুকিয়ে রাখা আমার মা, তার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিলেন কিছুক্ষণের জন্য সেই গল্প বলার সময় আমার মায়ের চোখে ভয়ের ছায়া দেখা যায়

যেই ভয়ের ছায়া এখনো কাটেনি পুরোপুরি ১৯৭১- আমার মা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে তার কতটুকু দেখতে পাচ্ছেন - সাহস করে সে প্রশ্ন তাকে আর করলাম না

আমার মতো সামান্য একজন ক্যামেরাম্যানের আপাতত সেই জটিল সমীকরণ জানবার দরকারই বা কী? সে হিসেব কষবার জন্য দেশে অনেক বিজ্ঞ ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ এবং আরো কতো বুদ্ধিজীবীরা তো আছেনই

কামিনী আম্মার প্রিয় ফুল আম্মা বললেন, “আমার কামিনী গাছটার পাশে ছবি তুলে দাও।”

ছাদের কোণায় কামিনী ফুলগাছের পাশে দাঁড়ানো আমার মা- বাংলাদেশ বাংলাদেশই আমার মা


আমার দরকার ছিল- ২০২১ এর ১৬ ডিসেম্বরে, গায়ে বাংলাদেশের পতাকা জড়ানো আমার মায়ের মুখে বিস্তৃত হাসি দেখা তাই আমি একটার পর একটা ছবি তুলতে থাকলাম


ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা,


রাশেদ জামান

সিনেমাটোগ্রাফার। আর্কিটেক্ট। আয়নাবাজি মুভির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী। টানা ছয় বছর কাজ করেছেন হলিউডের ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে তার তোলাছবি ব্যবহৃত হয়েছে ২০০৬ সালে বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘এ লিটল পিস’ পিকচার বুকের প্রচ্ছদে। আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছেন ইস্তানবুল, কায়রো এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে। আরো জানতে ভিজিট করুন : www.rashedzaman.com