English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশঃ ২০২১-০৬-৩০ ১০:০৫:২৩
আপডেটঃ ২০২৪-০৩-২৭ ২২:২৩:১০


কলকাতার সিরিয়াল এবং আমাদের গল্প

কলকাতার সিরিয়াল এবং আমাদের গল্প


রাশেদ জামান

  

ওয়েব সিরিজ অথবা কন্টেন্টের বিষয়বস্তু কী হবে, কী হবে না, কী ঠিক, কী ঠিক না- সেটা বিজ্ঞ নীতি নির্ধারকরা ঠিক করার আগে প্রথমত দর্শক এবং দ্বিতীয়ত একজন ক্যামেরাম্যান হিসেবে আমার একটা বিশেষ আর্জি আছে


সবার আগে কলকাতার অতি নিম্নমানের বাজে অভিনয় এবং গল্পের সিরিয়ালের সম্প্রচার এই দেশে সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা হোক

পারিবারিক সামাজিক অন্তর্কলহকে উস্কে দেবার সেরা দাওয়াই এই জিনিসঅন্যের সুখ সহ্য না হওয়া’  আপাত সরল কিন্তু আবার সরল না, বাংলাদেশি মা বোন ভাবিদের সন্ধ্যার শ্রেষ্ঠ বিনোদন এই রদ্দি মাল

আপনি যেমন youtube tutorial থেকে অনেক ইতিবাচক নতুন অনেক কিছু শেখেন, ঠিক তেমনি আমাদের পরিবারের অনেকে আমাদের অগোচরেসিরিয়াল’  নামক এই digital poisonous tutorial থেকে নিয়মিত how to do হিংসা, বিদ্বেষ, প্যাঁচ ইত্যাদি জিনিস শিখে আশেপাশের মানুষদের ওপর চুপিচুপি আচমকা silent attack করে বসেন

কলকাতার সিরিয়াল নিয়মিত দেখা মানে হচ্ছে – ‘Terrorism’ channel subscribe করে ‘How to make a Bomb’ tutorial video দেখা নিয়মিত দেখার কারণে Bomb-এর সাইজ দিনে দিনে বড় হয় আমাদের অজান্তে

 

আমাদেরবহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেইঅথবা খালেদ খান যুবরাজ অভিনীতফেরা’- মতো অতি উঁচু মানের, সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে থাকা ধারাবাহিক, মানেসিরিয়ালকলকাতারটিভিতেকোনোদিনও তৈরি হয় নি এবং ভবিষ্যতে তৈরি হবার কোনো সম্ভাবনাও নেই

আমাদের এই টিভি কন্টেন্টগুলোতে - পারিবারিক বন্ধন, সুস্থ বিনোদন, প্রেম, রসিকতা, সম্পর্কের প্রাকৃতিক জটিলতা - যৌনতা, রাজনীতি, সামাজিক সমস্যা এবং তার সম্ভাব্য সমাধান - কী ছিল না?

 

আমরা আমাদের নিজেদের মেধাকে কবে সম্মান দেয়া শিখবো?

 

কলকাতার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমাদের শেখার অনেক অনেক কিছু আছে কিন্তু daily soap opera থেকে মুক্তি পেতে চাই - এই সিরিয়ালওয়ালাদের কাছে শেখার কিচ্ছু নাই Non-fiction- তারা যতটা এগিয়ে আছেন, টেলিভিশনের ন্যারেটিভ কন্টেন্টে তার বহুগুণ পিছিয়ে আছেন আমাদের ছেলেপেলেদের ন্যূনতম বাজেটটা নিয়মমাফিক সময় মতো যদি দিতে পারেন - তাহলে দেখবেন ওরা কতদূর যেতে পারে

আপনারা সবাই সামাজিক মূল্যবোধ, শালীনতা এবং সংস্কৃতি রক্ষার কথা বলছেন তো? টিভির রিমোট তো আর সারাক্ষণ আপনার আমার হাতে থাকে না

 

আমি সেদিন খাবার টেবিলে বসে দূর থেকে টিভির সামনে বসা আমার বাবাকে লক্ষ্য করছিলাম তিনি প্রথমে রিমোটে কোথায় কীভাবে টিপ দিয়ে youtube- খুব মনোযোগ দিয়ে এক হুজুরেরকরুণা ভাইরাস”-এর সাথে স্বপ্নে দীর্ঘ মিটিং-এর বর্ননা শুনলেন এরপরেই আম্মার আগমণের সাথে সাথে - কলকাতার কোনো বাড়িতে বড় বউদির সাথে ঠাকুরপোর ঘরে আসা নতুন বউ-এর কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব এবং তার সাথে শিবলিঙ্গের পূঁজা সংক্রান্ত নিয়মকানুন এর জটিলতা (শিবলিঙ্গ হাতে ছোঁয়া যাবে কি যাবে না) নিয়ে অকল্পনীয় বাকবিতন্ডা - আমার বাবা মা দুজনেই গোগ্রাসে গিলছিলেন Big close up- দেখলাম আব্বার হাতে ভুলে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ সোডিয়াম ট্যাবলেট এবং আমার আম্মার হাতে দ্রুত জপতে থাকা তসবিহ্ (আমার মা দুই নামাজের ফাঁকে এই বিশেষ সিরিয়ালটা কখনোই মিস্ করেন না)

বাবার বয়স ৭৮ পরপর এই দুই মেরুর এই দুই বিশেষ কন্টেন্ট দেখার পর আমার বাবার blood sugar level 1.9- কমে গিয়ে hypo হবে না তো কার হবে?

 

দয়া করে আমাকে ভারত বিরোধীদের দলে ফেলে দেবেন না আমার শ্রদ্ধার এবং ভালোবাসার অনেক মানুষেরা ওপার বাংলার অধিবাসী আমি diversity তে এবং ভালো কিছু গ্রহণে বিশ্বাসী

কলকাতা সংস্কৃতিতে নি:সন্দেহে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে ওপার বাংলার ভালো জিনিসগুলো বাদ দিয়ে পঁচে যাওয়া জিনিস কেন আমরা ঘরে ঢুকাচ্ছি?

 

আমাদের সত্যজিৎ, মৃনালের সিনেমা দেখে অথবা সুনীল, সমরেশ-এর বই পড়ে এবং মান্নাদে, হেমন্তের গান শুনে নিজেদেরকে  এগিয়ে নিয়ে যাবার ঋণ কখনো শোধ হবার নয় আমাদের সেই ভালো সুস্থ অভ্যাসগুলো গেল কোথায়?

 

নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন অথবা হৈ চৈ-এর বিজনেস মডেলটাকে অনুকরণ করা যেতেই পারে সেটা উপকারীও বটে

আমাদের আশে পাশের শহরের এবং নদীর পারের গ্রামের মানুষের জীবন নিয়ে আছে বিশাল গল্পের ভান্ডার নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি না করে, কাউকে অনুকরণ না করে আমরা খুব সহজেই পারি আমাদের গল্পগুলো আমাদের মতো করেই বলতে

 শুরুতে কিছু ভুলভ্রান্তিতো হবেই সব এসময় ঠিক হয়ে যেতে বাধ্য আমি খুবই আশাবাদী

 

 



ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা,


রাশেদ জামান

সিনেমাটোগ্রাফার। আর্কিটেক্ট। আয়নাবাজি মুভির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী। টানা ছয় বছর কাজ করেছেন হলিউডের ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে তার তোলাছবি ব্যবহৃত হয়েছে ২০০৬ সালে বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘এ লিটল পিস’ পিকচার বুকের প্রচ্ছদে। আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছেন ইস্তানবুল, কায়রো এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে। আরো জানতে ভিজিট করুন : www.rashedzaman.com