রাশেদ জামান
আশির দশক। আমি ক্লাস ফোরে পড়ুয়া হাফপ্যান্ট পরা ক্ষুদে
ফুটবলার।
আমাদের বাসার ঠিক পেছনে খিলগাঁও বিশ্বরোডটা তখন ছিল সবুজ মাঠ। ফুটবল পাগল পাড়ার সব বন্ধুরা আর পাশের শাহী মসজিদ মাদ্রাসার ছেলেরা সকাল বিকাল সেখানে ফুটবল খেলতাম।
মাঠের একপাশে রেললাইন আর ঠিক অপর পাশে খিলগাঁও পোস্টঅফিস। মাঝখানে খেলার মাঠে এক ভোরে আমি আর পাশের বাড়ির ছেলে সুখা দুজনে ফুটবল দিয়ে গোলকিপিং প্রাকটিস করছিলাম। আমার তখন একমাত্র স্বপ্ন - বড় হয়ে ছোট মামার মতো গোলকিপার হবো।
পোস্টঅফিসের দোতলায় পোস্টমাস্টারের বাংলো। তার বড় মেয়ে পুতুলের সেদিন বিয়ের নিম্ন- মধ্যবিত্ত আয়োজন চলছে - অজানা মন খারাপের এক সকালে, দুটো মাত্র ঘরের সামনে খোলা ছাদে।
আশির দশকে মধ্যবিত্তের খিলগাঁওয়ে - বাড়ির ছাদে, আঙ্গিনায় অথবা পাড়ার ছেলেদের তত্ত্বাবধানে গলিতে প্যানডেলের ভেতর বরযাত্রীকে আপ্যায়ন করা হতো। আমরা ভেন্যু শব্দের সাথে তখনো পরিচিত না। পাড়ার মুদি দোকান থেকে কেনা সস্তা লাল নীল হলুদ কাগজ, বরফির মতো তিন কোণা করে কেটে পাটের রশিতে ভাতের আঠা দিয়ে একের পর এক লাগানো হতো। একটা খুঁটির মাথা থেকে অনেকগুলো এরকম রশি টানা দিয়ে ঝোলানো হতো।
ওইদিন ভোরবেলায় কুয়াশাও ছিল। লক্ষ করলাম পোস্টঅফিসের একদম উল্টোদিকে একজন যুবক রেললাইনের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে পোস্টমাস্টার সাহেবের বাংলোর দিকে তাকিয়ে আছে। দু’হাত পেছনে দিয়ে দাঁড়িয়ে, তা প্রায় অনেকক্ষণ। একচুলও নড়েনি সে যুবক।
আমি ট্রেন লাইনের প্রায় লাগোয়া এক বাড়িতে বড় হয়েছি। খেলাতে ব্যস্ত থাকা অবস্থায়ও আওয়াজ শুনে বুঝতে অসুবিধা হয়নি ময়মনসিংহের ভোরের ট্রেন কমলাপুর থেকে রওনা হয়ে শাহজাহানপুর রেলক্রসিং পার হয়ে প্রায় চলে এসেছে কাছে।
চলন্ত ট্রেনের প্রতি অদ্ভুত এক মোহ আজও কাটেনি আমার। এখনো ট্রেনের শব্দ শুনলে মনে হয় আমি বেঁচে আছি। ট্রেন লাইনের পাশে বেড়ে ওঠা আমি জীবনে যতোগুলো ট্রেন সামনে দিয়ে গিয়েছে, দূরে মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপলক তাকিয়ে দেখেছি। এর কারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন।
সেদিন ভোরে ফুটবল খেলা থামিয়ে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে যখনই আমাদের দিকে ধেয়ে আসা ট্রেনটার দিকে তাকিয়েছি, অবাক হয়ে দেখলাম ট্রেন লাইনের উপর এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যুবক দুহাতে লুকানো গামছা দিয়ে পুরো মাথা ঢেকে ফেলছে।
হতভম্ব আমি নিজের চোখে দেখলাম এক অভিমানী ব্যর্থ প্রেমিক যুবক, ট্রেনের সামনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ঝাঁপ দিলো। সত্যি সত্যি ঝাঁপ দিলো। তখনও ঠিকমতো ভোর হয় নি। একটা কাকও ডাকেনি। পোস্টমাস্টার সাহেবের বড় মেয়ে ট্রেনের আওয়াজে টেরও পেল না, এই মাত্র তার একমাত্র মায়াবী “অতীত” জীবন থেকে না চাইতেও কাঁটা পড়ে গেল - “শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়া” বিয়ের দিন, কুয়াশা ঢাকা এক শীতের সকালে।
আমার সদ্য কেনা সবচাইতে দামি সম্পদ ফুটবলটার কথা ভুলেই গেলাম। আমি আর সুখা দৌড় দিলাম ট্রেন লাইনের দিকে। মনে ক্ষীণ আশা যদি মানুষটা বেঁচে থাকে। আমি ততোদিনে একবার ট্রেনের ধাক্কায় আহত একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছি। মনে তাই ক্ষীণ আশা।
শীতের খুব সকালে একটা মানুষও আশেপাশে নাই। আমি যুবকের মাথাহীন বোকা অসাড় শরীরটা ট্রেন লাইনের পাশে পড়ে থাকতে দেখলাম। কুয়াশার ভেতর থেকে সুখা চুলের মুঠি ধরে যুবকের কাঁটা পড়া তখনো অভিমানী চেহারার মাথাটা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো- “হালায় সুইসাইড খাইছে।''
রেল লাইনের পাশে বেড়ে ওঠা সুখা অভিজ্ঞতার আলোকে তার মতামত দিলো।
আমি তখনো বাকরুদ্ধ। আমার ফুটবল খেলার বন্ধু মাদ্রাসার ছাত্র কামরুল, আমার চেয়ে বয়সে বড়, ততোক্ষণে দৌড়ে চলে এসেছে। হাতে মেসওয়াক করার একটা ডাল। ও নিশ্চয়ই ঘটনাটা রেল লাইনের পাশে খিলগাঁও শাহী মসজিদ মাদ্রাসার ছাদ থেকে দেখেছে। খুব মন খারাপ করে বললো, “আমি ওনারে কিন্তু ভালোভাবে চিনি। পুতুল আপার সাথে লাইন আছিলো, পাগলের মতো দুইজন দুইজনরে ভালোবাসতো। কিন্তু তাতে কী - এখনতো অনেক বড় ঝামেলা হইবো।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম -“কী ঝামেলা?”
অন্যমনস্ক কামরুল চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করে বললো, “আত্মহত্যা করলেতো জানাজা হয় না।”
আমি ভালোবাসা ও আত্মহত্যার মানে পুরোপুরি না বুঝেই ভয়ে ভয়ে বললাম, “তুই তো হুজুর। তুই পারবি না?”
চিন্তিত পিচ্চি হুজুর কামরুল মেসওয়াকের ঢাল কামড়াতে কামড়াতে বললো, “দুইজন ওজু করা মুসুল্লি তো অন্তত লাগবো। তুই হাফপ্যান্ট পরা, আর সুখা তো হিন্দু।''
আমি নিজেকে সামলে হাফ প্যান্ট পরা বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিপক্ক এক বুদ্ধি দিলাম, ''আমরা তিনজন কিছু দেখি নাই বললেই তো এটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল।”
আশির দশকে সেদিনের সকাল বেলা আমার জীবনের ভয়ঙ্কর একটি অভিজ্ঞতা লাভ করলাম।
আমার ছোট মামার কাজের সুবাদে তার খাটের নীচ ভর্তি “গোলাপী এখন ট্রেনে” সিনেমার রাশ প্রিন্ট অথবা ইন্টার পজিটিভ ছিল। যার প্রায় পুরোটা আমাদের জুতার বাক্সে তৈরি করা প্রজেক্টরে হাত দিয়ে পজিটিভ টেনে টেনে মামাতো ভাই মাহমুদের সাথে একসাথে দেখেছি।
ইতিমধ্যে নায়িকা ববিতার গভীর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে, মোটামুটি প্রেম ভালোবাসা ব্যাপারটা কী এবং নায়ক ফারুকের প্রেমিকা হারানোর কষ্ট কতোটা তীব্র হতে পারে - সেটা বেশ কিছুটা অনুধাবন করা শিখে গেছি।
আমি সেইদিন মৃত যুবকের লাশের পিছু পিছু রেল লাইনের ঐ পাড়ে শাহজাহানপুরে তার বাড়িতে গেলাম। মাত্র সন্তান হারানো এক মাকে দেখলাম। জীবনে প্রথম অকালে সন্তানহারা মায়ের আহাজারী বিলাপ নিজ চোখে দেখলাম। বেশীক্ষণ থাকতে পারলাম না। সহ্য করাটা কঠিন লাগলো।
ছুটে রেললাইনের এই পাড়ে পোস্টমাস্টারের বাংলোর বিয়ে বাড়িতে এলাম। সবাই নির্বিকার, কিন্তু ভেতরে আতংকিত। খুব ভালো বর নাকি পাওয়া গেছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বিয়ে, আসল খবর ফাঁস হয়ে গেলে সব শেষ। আমি ভয়ে ভয়ে মাথা ভর্তি চুলের অবিকল 'পুতুলের মতো দেখতে' পুতুল আপাকে দূর থেকে দেখলাম। শুধু এইটুকু মনে আছে - আমি ঐ দিনের পুতুল আপার চেয়ে ফ্যাকাশে পাথর মানুষ আর কোনোদিনও দেখি নি। পুতুল আপা কি তাহলে আসল খবর জেনে গেছে ততোক্ষণে?'
আমি তখন পর্যন্ত জানতাম যে বিয়ের সময় যে সূরাটা পড়ানো হয় তাতে বাচ্চা হয় এবং বিয়ের রাতে নতুন একজন মানুষের সাথে এক ঘরে থাকতে হয়, যাকে বাসর ঘর বলা হয়। ঐ ঘরে দুজনকে পাঠানোর সময় বিয়ে বাড়ির কম বয়েসী সবাই কেন জানি কাউকে বিপদে ফেলার দুষ্টামিতে অনেক হাসাহাসি করে।
সকালে ট্রেনের সামনে বোকার মতো ঝাঁপ দেয়া অভিমানী যুবকের নাম ততোক্ষণে পাড়ার সবার মুখে মুখে। আমি তখন সাইজে ছোট হলেও বড়দের মতো ভাবতে শিখছি। একটা জিনিস ভেবে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম - আজকেই কেন বাদল ভাইকে এভাবে মারা যেতে হবে?
আমার ছোটবেলার সবচেয়ে বড় আফসোস ছিল আমার কোনো বড়বোন নাই কেন? রান্নাবাটি আর বউচি খেলতে খেলতে বুঝতে শিখেছিলাম - বড়বোন আসলে একটা “বোনাস আম্মা”। যে মানুষটা শাসন তো করেই না, বরঞ্চ মায়ের দ্বিগুণ প্রশ্রয় দেয়। আমি ছোটবেলা থেকে আজ অবধি পুতুল,শান্তা, মন্টি আপাদের মাঝে সেই একস্ট্রা “বোনাস মা” কে খুঁজে নিয়েছি।
আমার তীব্র কষ্ট হচ্ছিল পুতুল আপার জন্য। তখন পাড়ার বিয়েগুলো ভরদুপুর বেলাতেই হতো। সন্ধ্যা গাঢ় হবার আগেই বরযাত্রী নতুন বউকে নিয়ে চলে যেতো। অন্ধকারে গয়নাগাটি ডাকাতি হবার একটা ভয় ছিল।
ছুটির দিন হবার কারণে স্কুলে যাবার তাড়া ছিল না। স্কুলের টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে পটকা কিনেছিলাম বিয়ে বাড়িতে ফোটাবো বলে। কিছুই মনে থাকলো না।
আমি সকালে ফুটবল খেলার সময় নোংরা হয়ে যাওয়া হাফপ্যান্টটা পর্যন্ত বদলাতে ভুলে গেছি। বরযাত্রী ঢাকার বাইরে থেকে দেরিতে আসাতে বিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ালো। সিদ্ধান্ত হলো পোস্টমাস্টার কাকুর বাংলোতে, মানে পুতুল আপাদের বাড়িতেই বাসর ঘর হবে। নিশ্চয়ই কাকুর ধার করা টাকায় কেনা যৎসামান্য সস্তার গয়নাগুলো ডাকাতের হাতে হারানোর ভয় ছিল।
সিদ্ধান্ত হলো পরের দিনের প্রথম ট্রেনে বরযাত্রী নতুন বউ নিয়ে তাদের শহর ময়মনসিংহে ফেরৎ যাবে।
আসর নামাজের পর পিচ্চি হুজুর বন্ধ পোস্টঅফিসের সিড়িতে আমাকে খুঁজে বের করলো। বললো, “চল উপরে দেখে আসি কী হয়”।
এ বাড়িতে পিচ্চি হুজুরের অবাধ যাতায়াত। কারণ পুতুল আপার ছোটবোন শিমুল ওর কাছেই কোরআন শরীফ পড়তো। অনেক পরে জানতে পেরেছি, কোরআন শরীফ পড়ানোর বাইরে একটা গোপন কাজ পিচ্চি হুজুর করতো। বাদল ভাইয়ের কবিতার খাতা, বর্ষার প্রথম কদম ফুল, পুতুল আপার প্রেমপত্র পিচ্চিই গোপনে রেললাইনের এপাড় ওপাড় আনা নেয়া করতো।
উপরে গিয়ে দেখি, সবে মাত্র দুটো শোবার ঘরের একটা ঘরে বাসর ঘর সাজানো হচ্ছে। অচেনা কমবয়েসী অতিথিরা বিয়ে বাড়ির আনন্দে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। আমি লক্ষ্য করলাম ঐ ঘরের জানালা দিয়ে কুয়াশা সন্ধ্যায়ও মাঠের ওপারে রেল লাইন দেখা যায়। সিগন্যাল ও ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে হলুদ লাল আলোতে রেললাইনের দীর্ঘ লাইনগুলো চকচক্ করছে। ঠিক এ জায়গাতেই আজ ভোরে বাদল ভাই আত্মহত্যা করেছিল না?
ঐ দিন শীতের সকাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাকে এক ধাক্কায় শৈশব থেকে পরিপূর্ণ কৈশোরে ঠেলে দিলো। সুখার হাতে বাদল ভাইয়ের অভিমানী কাঁটা মাথাটা চোখে ভেসে উঠলো। বোকা বাদল ভাইকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল, পুতুল আপার কি এতটাই শাস্তি প্রাপ্য ছিল?
পুতুল আপা কেমন জানি একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে গেছে, একবারও কাঁদতে দেখলাম না। কিন্তু ছোট্ট আমি পুতুল আপার কষ্টে সারারাত ছটফট করলাম।
আমার নানা সফেদ সাদা একজন সুফি মানুষ ছিলেন।প্রতিদিন নানাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর সময় নানার শরীরের মিষ্টি পানের জর্দার গন্ধে, রাজ্যের ঘুমে আমি কখন ঘুমিয়ে পড়তাম আমার মনেও থাকতো না। কিন্তু ঐ দিনকার রাত ভিন্ন এক রাত ছিল আমার জন্য।
সকালে হঠাৎ আধো ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি আমার ফেরেশতা নানা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে, “নানা ভাই, কী হইছে তোমার? সারারাত ঘুমের মধ্যে কাঁনতেছিলা কেনো? ভূতের ভয় পাইছো?”
আমি নানার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দৌড় দিলাম দু বাড়ি পরেই পোস্টমাস্টারের বাংলোর দিকে। পুতুল আপাকে নিয়ে বরযাত্রী ভোরবেলাতেই কমলাপুর রেলেস্টশেন চলে গেছে। পোস্টমাস্টার কাকা এবং বাড়ির সবাই সামনের চিলেকোঠায় অপেক্ষা করছে ময়মনসিংহের সকালের ট্রেনটার জন্য। একটু পর পুতুল আপা তার বরকে নিয়ে এই ট্রেন দিয়ে পোস্টঅফিসের সামনে দিয়ে চলে যাবে। সবাই হাত নেড়ে এক ঝলক শেষ বিদায় দেবার অপেক্ষায়। পোস্টমাস্টার কাকুর চোখ কি তার বড় মেয়ের গভীর বেদনায় ছলছল করছিল তখন? আমার মনে নেই।
আমার শুধু এইটুকু মনে আছে, গতকাল ঠিক এই সময়ে একই ট্রেনের নীচে বাদল ভাই ঝাঁপ দিয়েছিলেন। আমি গতকাল মাঠের যে জায়গা থেকে বাদল ভাইকে দেখেছিলাম, ঠিক সে জায়গাতেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম নতুন বউ পুতুল আপাকে শেষবারের মতো দেখার অপেক্ষায়।
দুই.
আমাদের খিলগাঁওয়ের একান্নবর্তী বাড়িতে আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষ বড় মামীকে (আমি মিম্মি বলে ডাকতাম) পাঁচ বছর বয়সে আমাকে ভাত খাইয়ে দেবার সময় নাকি বলেছিলাম, আমি বড় হয়ে সিনেমার ক্যামেরাম্যান হতে চাই!
যেটা এখনও পর্যন্ত হতে পারি নি। ছোটমামার কাজের সুবাদে বাড়িতে বড় বড় ক্যানের ভেতরে রাখা ফিল্ম নেগেটিভের গন্ধ ভেসে বেড়াতো - যা আজও ঘোর লাগায়।
পুতুল আপা আর বাদল ভাইয়ের গল্প সেদিনের পর থেকে আমার মাথায় গেঁথে গেল। বড় হয়ে একদিন এই গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর স্বপ্ন নিয়ে আমি বড় হতে থাকলাম।
আমি এরপর যতো গল্পই ভাবি না কেন, পুতুল আপার বিয়ের দিন তার বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে বাদল ভাইয়ের ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দেয়ার স্মৃতি সময়ের আবর্তনে বিস্মৃত না হয়ে উল্টো আরো পরিস্কার হতে থাকলো।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি ভালোবাসা এবং আত্মহত্যার স্পষ্ট মানে বুঝতে শুরু করলাম আমার মতো করে। আমি ততদিনে অনুধাবন ও বিশ্বাস করতে শুরু করেছি, বাদল ভাইয়ের আত্মহত্যা স্রেফ কোনো বোকা অভিমান ছিল না - ছিল ভালোবাসার হিসেব বুঝে না পাবার প্রতিবাদ ও তীব্র কষ্ট পাবার প্রতিশোধ।
নব্বই এর দশকে স্হাপত্য বিদ্যায় পড়াশোনা করার জন্য তুরস্কে গিয়ে হঠাৎ পরিচয় হলো টার্কিস কম্পোজার Erkan Oğur এর সঙ্গীতের সাথে।
সেই থেকে এই গল্প নিয়ে উত্তেজিত হবার আরেক ধাপের শুরু। এই গল্প নিয়ে আমার কল্পনার ভিজুয়ালগুলো অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে আমি যখন নিয়মিত Erkan Ogur শুনতে শুরু করি। আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় ছোটবেলার স্মৃতির কারণে গলার কাছে আটকে থাকা কষ্টটা আরো বেশি অনুভূত হতে থাকে।
আমি ইস্তানবুলে বসফরাসের পাশে কোনো বেঞ্চে বসে কতো সন্ধ্যা পার করেছি আর এ গল্প নিয়ে ভেবেছি কে জানে? আমার আর্কিটেকচার স্কেচ্ বুকে কতশত দাগ কেঁটেছি।
তারপর লস অ্যাঞ্জেলেসে ফিল্ম স্কুল এবং পরবর্তীতে হলিউডে ফিল্ম ক্রুর জীবন - এ গল্প আমাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে দুই যুগের বেশি সময়।
এই দীর্ঘ সময়ে আমি আমার গল্পে কতো নতুন কাল্পনিক চরিত্র যোগ করেছি, কত চরিত্র বাদ দিয়েছি। গল্পের পটভূমি ঢাকা শহর বদলে ময়মনসিংহে নিয়ে গেছি। কারণ রাজধানী থেকে জেলা শহরে শ্রেণী বৈষম্য খুব ষ্পষ্ট দেখা ও অনুভব করা যায়। আমি বহু বছর পর মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম - আর্থিক এবং সামাজিক শ্রেণী বৈষম্যই বাদল ভাইয়ের পরাজয়ের ছিল মূল কারণ।
একদিন সত্যি সকালে একই ট্রেনে করে ময়মনসিংহ চলে গেলাম। শহরটার প্রতি আমার তৈরি হলো অদ্ভুত এক ভালোলাগা। রিক্সা করে কয়েকদিন ময়মনসিংহ শহরটা ঘুরলাম। মনে হলো এই গল্প এই শহর ছাড়া অন্য কোথাও শুট করলে হবে না। আমার গল্পে মেয়েটা হয়ে গেল জেলা জজ সাহেবের মেয়ে, আর ছেলেটা হয়ে গেল রেলে চাকরি করা দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী বাবার সন্তান।
গল্পের অনেক কিছু সময়ের আবর্তনে বদলালো, শুধু বদলালো না - ট্রেনলাইন ও ট্রেন। আমার জীবনের এরচেয়ে বড় metaphor আর কী হতে পারে জানি না।
২০০৭ এ দেশে ফিরে আসার পর কাজের সুবাদে রাজীব আশরাফ নামে এক পাগলা তরুণ কবির সাথে পরিচয় হলো। আমার গল্পের স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য হন্যে হয়ে আমি কাউকে খূঁজছি। গল্প শোনার পর রাজীব বললো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ছোটগল্প “শঙ্খমালা”
টা পড়ে দেখার জন্য। পড়ার পর অসম্ভব ভালো লাগলো। আমার গল্পের সাথে এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক খুঁজে পেলাম।
কোনোদিন যদি চলচ্চিত্রায়ন করতে পারি, তার শুরুটা কীভাবে হতে পারে, তার একটা চমৎকার ধারণা আমার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ছোটগল্প “শঙ্খমালা” থেকে পেলাম। বাদল ভাইয়ের মায়ের সম্ভাব্য চরিত্র এবং মেয়েটা শহরে ফেরার পর তাকে পায়েশ রেধে পাঠানোর আইডিয়াটা মনে ধরে গেলো। আমি সিনেমার দ্বিতীয় সিনটা পেয়ে গেলাম। ঐদিনই মেয়েটার নাম বদলে রাখলাম “নীতু”।
স্যারের সাথে আমেরিকান এ্যামবাসির ভেতরে ভিসার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে একজন নামকরা প্রকাশকের মাধ্যমে পরিচয় হলো। সাহস করে “শঙ্খমালা” নিয়ে আমার ভালোলাগা এবং আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একটা যোগসূত্রের কথা স্যারকে বললাম। তিনি বললেন, ''একদিন নুহাশ পল্লীতে আসো। তোমার গল্প আরাম করে শুনি।
দূর্ভাগ্য, এতো লোভনীয় নিমন্ত্রণ পাবার পরেও আমার আর কোনোদিন এই অসাধারণ জাদুকরের সাথে দেখা হয় নি। আমার এই গল্পটা সবচেয়ে সঠিক মানুষটাকে বলার এতো বড় সুযোগ পাবার পরও শেষ পর্যন্ত হারালাম। কারণ তিনি নিজেই খুব দ্রুত হারিয়ে গেলেন।
বাংলাদেশে এসেছিলাম সিনেমা বানাতে। ভিডিও ক্যামেরায় তখন পর্যন্ত অনভ্যস্ততা এবং ৩৫ মি.মি-এ অভিজ্ঞতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে বিজ্ঞাপনে জড়িয়ে গেলাম। নামকরা পরিচালক অমিতাভ রেজার সাথে পরিচয়ের পর সিনেমা নিয়ে আরো বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।
অমিতাভের প্রস্তাবে জীবনে প্রথম টিভি নাটক শুট করলাম “একটি ফোন করা যাবে প্লিজ”। বিজ্ঞাপনে হাঁপিয়ে ওঠার কারণেই হয়তো হুড়োহুড়ি করে শুট করার পরও অনেকদিন পর কাহিনীচিত্র শুট করায় বেশ আনন্দ পেলাম। ভিডিও ক্যামেরার প্রতি ভয়টাও কিছুটা কমলো ২০০৮-এর এই ঘটনায়।
২০০৯ এর রোজার ঈদে NTV’র জন্য অমিতাভের পরিচালনায় আরেকটি নাটক “Equal To” বেশ স্বাচ্ছন্দ নিয়ে করলাম, যদিও সময় ছিলো অল্প। দুধের সাধ ঘোলে কিছুটা মিটলেও - আসল সিনেমা না করার আক্ষেপ ভিতরে ক্রমাগত বড় হতে থাকলো।
২০০৯ এর কোরবানী ঈদ উপলক্ষ্যে এন.টি.ভি অমিতাভ রেজাকে আরেকটি টিভি নাটক করার অনুরোধ করলো। অমিতাভ গল্প খোঁজা শুরু করলো।
আমি করলাম মস্ত বড় একটা ভুল। আমাকে দুই যুগের বেশি তাড়িয়ে বেড়ানো গল্পটি নিয়ে অমিতাভ কে “টিভি নাটক” বানানোর অনুমতি দিলাম।
ততদিনে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে - ঈদের আগে হুড়োহুড়ি করে টিভি নাটক বানানোর সার্কাস প্রক্রিয়া নিয়ে। পরিচালকদের মূল মাথা ব্যথা থাকে কীভাবে শিল্পীদের জটিল শেডিউল ম্যানেজ করে কতো কম সময়ে যথাসাধ্য স্বল্প খরচে সর্বোচ্চ দুদিনের মধ্যে এডিট করে কোনো মতে টিভিতে প্রচার করে সাময়িক বাহবা পাওয়া। গল্পের প্রতি অযত্ন থেকে যায় প্রতিটি পর্যায়ে দেশের মিডিয়ার ভুল সিস্টেম ও অজ্ঞতার কারণে।
পরিচালক তার কাজটি কোনোমতে জমা দেবার পর, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে টিভি চ্যানেলের ইন হাউস এডিটর পরিচালকের অনুমতি ছাড়াই গল্পের আগামাথা কিছু না জেনে বিজ্ঞাপনের বিরতি তৈরির জন্য বসদের খেয়াল খুশি মতো নতুন করে এডিট করেন।
এতে বিশেষ করে elliptically edited যে কোনো গল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরো হাস্যকর হচ্ছে - তারা এমনকি তাদের গৎবাঁধা অভিধান অনুযায়ী নানা যান্ত্রিক ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করেন।
আমি তখন নতুন নতুন ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে নাড়াচাড়া করার পর দারুণ একটা বিষয় আবিষ্কার করলাম। এই প্লাস্টিক ক্যামেরাগুলোতে চাইলেই ইচ্ছাকৃত বড় বড় ভুল করা যায়।
এই ভুলগুলো আমার অভিধানে শৈল্পিক স্বাধীনতা। আমি perfection-এ যতোটা emotion খুঁজে পাই, imperfection-এ তারচেয়ে অনেক বেশি নিজেকে প্রকাশ করার উপাদান এবং উপায় খুঁজে পাই। কারণ আমি এবং আমার পছন্দের চরিত্রগুলো বসবাস করি imperfect পৃথিবীতে। সেটাই কি “বাস্তবতার” সৌন্দর্য না?
আমি আমার ছাত্র এবং অ্যাসিস্ট্যান্টদেরকে প্রায়ই বলি,
“ছোট ভুল ভুল, বড় ভুল আর্ট”।
তাই বুঝেশুনে বড় বড় ভুল করি। নতুন এই ভিডিও মাধ্যম আমার অবাধ্য প্রকাশভঙ্গিকে প্রশ্রয় দেয়। আমি তার শতভাগ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, টিভির লোকজন প্রত্যেকবার আমার স্বাধীন ইচ্ছাকৃত ভুল প্রকাশভঙ্গিকে আমার অজ্ঞতা হিসেবে গণ্য করেন। White Balance অথবা Shutter speed সব সময় যে সঠিক হতে হবে না, সেটা তাদের কে বোঝাবে?
Technique-এর অনেক উর্ধ্বে Emotion-এর বসবাস। আমরা এখনো technically perfection এর গন্ডিতে আটকে আছি। Impressionism চলমান ফটোগ্রাফিতে মেনে নেয়ার জন্য আমরা একদমই প্রস্তুত না।
আমি স্বীকার করি সম্পূর্ণ দোষটাই আমার। এই গল্পের ব্যাপ্তি এবং গভীরতা শুধুমাত্র সিনেমার জন্য উপযোগী ছিল। আমি টিভি নাটকের জন্য অমিতাভ রেজাকে এই গল্পটি নিজ থেকে কেন বললাম জানি না। খুব সম্ভবত সিনেমা না করার গভীর হতাশা ততদিনে পেয়ে বসেছিল।
অমিতাভকে “শঙ্খমালা”র শুরুর অংশটা ব্যবহারের জন্য হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নেবার অনুরোধ করে ময়মনসিংহ চলে গেলাম লোকেশন কনফার্ম করবার জন্য। অমিতাভকে ধন্যবাদ নিজে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কাছ থেকে অনুমতি আনার জন্য।
ময়মনসিংহ থেকে ফিরে এসে প্রথম ড্রাফট পড়লাম। আমার গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র “পিচ্চি হুজুরের” কোনো অস্তিত্বই নাই। বাকিটাতেও আমার অনেক হতাশা। আসলে প্রথম ড্রাফটেই আমার দুই যুগের বেশি সময় ধরে ভাবা গল্প দাঁড়িয়ে যাবে - এই চাওয়াটা নিতান্ত অন্যায়। Over expectation যাকে বলে।
আমার হতাশা টের পাওয়ার পর বন্ধু/ পরিচালক অমিতাভ রেজা যথাসাধ্য চেষ্টা করলো চিত্রনাট্যে আমার গল্পটা ফুটিয়ে তুলতে।
চারদিন ময়মনসিংহের শুটিংয়ে ইউনিটের সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও আমি এতবছর যা ভেবে রেখেছিলাম তার আংশিক ধারণ করা গেল মাত্র।
সম্পাদক বাশার জর্জিস ঈদের আগে মাত্র দেড়দিন সময় পেয়েছিলেন সম্পাদনা করার জন্য, যা কিনা তার উপর মানসিক অত্যাচারের সামিল।
এই প্রজেক্টর সবচেয়ে বড় পাওয়া অভিনেতাদের অভিনয়। আমি এই গল্প বলতে না পারার কষ্ট কিছুটা হলেও ভুলে যাই চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান এবং বিশেষ করে অত্যন্ত গুণী অভিনেত্রী নারগিস আক্তারের অসাধারণ অভিনয় দেখে।
খুব মজার ব্যাপার হচ্ছে গল্পের জন্য ক্রেডিট লাইনে কোথাও আমার নাম নেই। ভালোই হয়েছে। এতে অতৃপ্তি সম্পূর্ণতা পেয়েছে।
তিন.
একজন কথা বলতে সক্ষম মানুষের, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কথা বলতে না পারাটা যেমন কষ্টের - দুই যুগ কোনো গল্প প্রিভিজুয়ালাইজ করার পর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ভিজুয়ালি ক্যাপচার করতে না পারাটা একই রকম কষ্টের।
এই গল্প এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সেই কষ্ট টের পেয়ে এই প্যানডেমিক-এ আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ এগিয়ে এসেছে। তার নাম রিহান রহমান। ও খুব যত্ন নিয়ে আমার মতো খুঁতখুঁতে মানুষকে সহ্য করে খুব সুন্দর একটা ট্রেইলার এডিট করেছে।
আর্কাইভ করার প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশে এখনো কেউ অনুধাবন করেন না। শত বাঁধাতেও সেই সময়ে HD তে শুট করার পরও হাতে এখন আছে খুবই কম রেজুলেশনের একটি ফাইল। ২০০৯-তে কালার গ্রেডিং বিষয়টা চিন্তারও বাইরে ছিল।
আমি এখনো স্বপ্ন দেখি, এক ধরনের জেদ কাজ করে - কোনো একদিন সম্ভব হলে একই কলাকুশলীদের পারলে সাথে নিয়ে আয়োজন করে, মাথা ঠাণ্ডা করে এই গল্পটা সিনেমার জন্য শুট করবো।
শেষের কিছু কথা
আত্মহত্যা করার অপরাধে আশির দশকে অভিমানী বাদল ভাইয়ের জানাজা আসলেই হয় নি। শুনেছি তাড়াহুড়ো করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রাতের অন্ধকারে তার দাফন হয়েছিল।
আর এর পরের দিন ট্রেনের ভেতর জানালার পাশে জোর করে বসিয়ে দেবার পরও পুতুল আপা রেল লাইনের পাশে অপেক্ষমাণ কারো দিকে একবারও তাকান নি। আমার ছোট্ট পায়ে ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখলাম - পুতুল আপা অঝরে কাঁদছে।
পুতুল আপা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে আমার জানা নেই। কিন্তু এই মানুষটার কষ্ট আমাকে এখনো কষ্ট দেয় - তাকে খুঁজে পাবার জন্য হলেও এই সিনেমাটা আমাকে বানাতেই হবে।
খুঁজে পেলে আঁধপাকা চুলের পুতুল আপার মাথায় পরম মমতায় হাত রেখে বলবো - এক জীবনে এতোটা শাস্তি তার প্রাপ্য ছিল না কোনোভাবেই।
একরোখা অভিমানী বাদল ভাইয়ের জন্য পুতুল আপার চোখ যেন আর কোনোদিন না ভেঁজে অজান্তেও।
বি:দ্র: আবেগের লাগাম টেনে না ধরতে পারার জন্য লেখাটা বেশি বড় হয়ে গেল। কারো পড়ার ধৈর্য থাকবে না জেনেও চালিয়ে গেলাম নিজের মনকে সান্তনা দেবার জন্য।
আরেকটা বিষয়, এই নাটকটা বাজেট ও সময় স্বল্পতার কারণে পুরোটাই হাউজহোল্ড এনার্জি সেভিং বাল্ব দিয়ে শুট করা। কোনো মুভি লাইট ছিল না।
নীচের চমৎকার trailer টার জন্য Reehan Rahman
কে আবারো ধন্যবাদ।
সিনেমাটোগ্রাফার। আর্কিটেক্ট। আয়নাবাজি মুভির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী। টানা ছয় বছর কাজ করেছেন হলিউডের ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে তার তোলাছবি ব্যবহৃত হয়েছে ২০০৬ সালে বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘এ লিটল পিস’ পিকচার বুকের প্রচ্ছদে। আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছেন ইস্তানবুল, কায়রো এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে। আরো জানতে ভিজিট করুন : www.rashedzaman.com
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
মাইক্রোসফট অফিস স্পেশালিস্ট (M.. বিস্তারিত
মুস্তাকিম আহমেদ বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত