English
ঢাকা, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

প্রকাশঃ ২০২১-০৪-০৪ ০৮:২০:০২
আপডেটঃ ২০২৫-০৭-০৪ ০২:১১:২৬


সৌরভ: স্মরণে স্মৃতিতে

 সৌরভ:  স্মরণে  স্মৃতিতে


আবদুল্লাহ আল মোহন


আমাদের শোকের মহাসাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় পরলোকগমন করে বন্ধু সৌরভ (সৈয়দ শওকত ইমাম) পরদিন ফজরের নামাজের পর জানাজা শেষে তাজমহল রোড কবরস্থানে চিরশায়িত করা হয়। সৌরভ আর নেই, হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছে- বন্ধু আজাদের কাছ থেকে এই চরম দু:সংবাদটি শোনার মুহূর্তে স্তব্ধতা-শোক-বেদনা জাপটে ধরে।

দীর্ঘদিনের পরিচয়ের-আলাপের-আড্ডার নানা স্মৃতি ভেসে ওঠে মানসপটে। মৃত্যু অনিবার্য সত্য। মৃত্যুকে এড়ানোর পথ নেই। সৌরভের মৃত্যু অকালমৃত্যু। সৌরভ নাই মানি না, সৌরভ আছে আমাদের অন্তরে-অনুভবে গভীর প্রত্যয়ে। যদিওমৃত্যু মানে নতুন পথে যাত্রা। আসলে মানুষ কোথাও কোথাও খুব অসহায়। যেখানে মানুষের করার কিছুই থাকে না। মানুষ জন্মটা যেমন দেখতে পায় না, নিজের মৃত্যুটাও মানুষ দেখতে পায় না। মানুষের মৃত্যুটা যে খুব অনিশ্চিত। মানুষ যতই বড় হোক না কেন এখানটাতে তার কোনো হাত নেই

 




.

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশতম ব্যাচের, সরকার রাজনীতি বিভাগের সতীর্থ ছিলাম আমরা। প্রাণের সবুজ প্রাঙ্গণে আমাদের অবুঝ মনের উচ্ছলতা ভরা দিন-রাত্রিগুলি ছিলো আমোদে ভরা, স্বপ্নে গড়া। বন্ধুটির সঙ্গে আরও কত স্মৃতি আছে, সব আজ আর মনেও নেই। আসলে আমাদের প্রায় তিন দশকের পথচলার স্মৃতিচারণা স্বভাবতই আমাকে গভীরভাবে বেদনাহত করে, শোকে কাতর করে। ভাবনাগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়, ভাষা শব্দ সৌরভের মতোই হারিয়ে যায়।

স্মৃতিচারণার এই অবকাশে সহযাত্রীবান্ধব সৌরভের উদ্দেশে আমার হৃদয় নিংড়ানো যত শ্রদ্ধার, ভালোবাসার উৎসর্গ। স্মৃতিচারণে কম্পিউটারের কিবোর্ডে শব্দঘর তৈরিতে চোখ ভিজে আসে ভালোবাসায়, প্রীতির স্মৃতির মেঘবৃষ্টি জলে। ভাবনার মেঘমালা ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। সৌরভের সঙ্গে সম্পর্ক-ঘনিষ্ঠতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হৃদয়ের টানের যে দায়বদ্ধতা, তাও তো এড়ানোর নয়। ওকে নিয়ে এই বেদনাকাতর লেখাটিও অন্তরের তাগিদ থেকেই। 

 

.

গভীর প্রগাঢ় নৈকট্য ছিল সহপাঠী বন্ধুটির সাথে, পাঠ্যক্রমের বৃত্তের বাইরের আলোকিত চিন্তা চর্চায়, সপ্রতিভ বিতর্কে, প্রদীপ্ত মনন-সৃজনীভাবনায়। সৌরভের বন্ধুত্ব যেমন আমাকে নানাভাবে প্রাণিত করেছিলো, তেমনই নির্মাণ করতে সহযোগিতা করে গেছে গভীর সংবেদী এবং শক্তিশালী চিন্তা মননের জগৎ সৃষ্টিতে। স্পষ্টভাষী সৌরভের ব্যক্তিত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা সাহিত্যবোধ এবং রুচি আমাদের সখ্যকে আরো দৃঢ়, আনন্দময় করে তুলেছিল। আমৃত্যু আমাদের মধ্যে অটুট ছিল গভীর বন্ধুত্ব, শৈল্পিক হৃদ্যতা।

বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন থেকেই হিটো, আজাদ, সাঈদ, শাকিল, মিঠু, সৌরভসহ আমরা হয়ে উঠেছিলাম অভিন্নহৃদয় বন্ধু, শিল্পসহযাত্রী। আমাদের সৃষ্টিশীলতায়, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে এই বন্ধুত্বের বন্ধন সহযোগিতায় উঠে এসেছে নানা ভঙ্গিমায়। যার ফলাফল-প্রমাণ পাই পরবর্তীকালে প্রত্যেকের জীবন সাধনায়। সৌরভ ছিলো আজন্মের মুগ্ধ পাঠক গভীর বিশ্লেষক। ফলে শিল্পসাহিত্য-সমাজ-শিক্ষাসহ নানা বিষয়ে আলোচনায় পরিচয় পেয়েছি গভীর প্রাজ্ঞতা, পাঠ জীবন অভিজ্ঞতার নির্যাস

 

 

.

অতিমারী করোনাকালে অনন্তধামে পাড়ি দিলো সৌরভ (জন্ম: ২৬ মে ১৯৭১ প্রয়াণ : ২৭ মার্চ ২০২১) আর করোনাজনিত নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে বাসার বাইরে বের হওয়ার মতোন শারীরিক অক্ষমতায় আমি প্রিয়তম বন্ধুকে শেষ দেখা দেখতে পেলাম না, জানাজাতে উপস্থিত থাকতে পারিনি, এই বেদনার ভারও অসীম, আমৃত্যু আমাকে বহন করতে হবে সেই অপরাধবোধ। যেমন বহন করছি করোনাকালে প্রয়াত (১৭ মে ২০২০) আমার পিতাকেও শেষ দেখা দেখতে যেতে না পারায়। অতিমারী করোনাকালের সময়টা কি খুবই ট্র্যাজিক যাচ্ছে? সব প্রিয়জনেরা আকস্মিকভাবে বিদায় নিচ্ছেন। যেন বা একে একে মিলিছে দেউটি। আমাদের এমনতরই দুর্ভোগ্য, কী যে অতল শূন্যে অবস্থান আমাদের! বড় অসহায় লাগে! এমনটা কখনো ভাবতেই পারিনি- কতশত প্রিয়মুখ দেখতে পারছি না, দেখতে পাবো না আর কোনদিন। 

 

.

করোনায় গৃহবন্দিতে, নি:সঙ্গকালে স্বভাবতই একান্ত করে স্মৃতিচারণায় পেয়ে বসে আমাকে। হা-হুতোশ করব, না স্মৃতিচারণা করব, কিংবা মূল্যায়ন করব সেই বন্ধুত্বটাকে- বুঝে উঠতে পারছি না। কেমন যে লাগছে সৌরভকে হারিয়ে, বলে বোঝাতে অক্ষম-আমি, আমরা অনেকেই। প্রায় তিন দশকের মতো কাল আমরা কাটিয়েছি একসঙ্গে- একুশের অনেকের সাথে। এখন সৌরভ হারিয়ে গেলো আরেক ধামে, এর আগেও অচেনালোকে চলে গেছে সরকার রাজনীতির, একুশের আরেক বন্ধু কবীর। এরপরে কে তালিকায় আছে- অজানা। আগে চলে যাবার কথা তো আমারই ছিলো, অথচ চলে গেলো সৌরভ। করোনায় আমিও সপরিবারে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারির ২৬ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হই। মৃতপ্রায় এগারোটি দিনের স্মৃতি খুঁজে ফিরি, পাই না স্পষ্ট করে যদিও।

সৌরভও সস্ত্রীক আমার পরে মার্চে আক্রান্ত হয়ে আর ফিরে আসতে পারলো না। আমি ফিরতে না পারলে আমাকে নিয়েও নিশ্চয় স্মৃতিচারণায় অংশ নিতো সৌরভ। সঞ্চালনা করতো নিশ্চয়ই দুজনেরই অসম্ভব প্রিয়জন বন্ধু হিটো (জাহেদুল আলম) অথচ এই হিটোও মরতে মরতে বেঁচে ফিরে আসে আমাদের মাঝে, সেটা যে কী আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। আমি আর হিটো হয়তবা অনেকটা সময় (অনাথ) আশ্রমবাসী ছিলাম বলেই মৃত্যু আমাদের কাছে টানেনি, জগতের আনন্দ আশ্রমে ফেরত পাঠিয়েছে- স্বজন হারানোর বেদনা ভার বহন করার, ভোগ করার জন্য। যদিও নিশ্চিত- আমরা আসলে প্রত্যেকেই মরণের মহাসড়কে হাঁটছি, কেউ আগে কেউ বা পরে অনন্তলোকের অসীম গন্তব্যে পৌঁছাবো- এই আর কী !

 

.

আর সকলের মতোন আমাদেরও মুখোমুখি পরিচয় শ্রেণিকক্ষেই বোধকরি। যেহেতু আমরা পড়েছি একই বিভাগে ফলে সৌরভসহ অন্যদের সঙ্গে শুরুতে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, ক্লাস রুম থেকে ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে সেই সেতুবন্ধ গভীর হয়, অটুট হয় কামালউদ্দিন হলে ওর সাময়িক অবস্থানকালে। বেশ আড্ডাবাজ ছিলাম আমরা। মনে পড়ে- সহপাঠী হুমায়ুন (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী) আর সৌরভ নজর কেড়েছিলো হাতে ইংরেজি সাহিত্যের বই নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কারণে। স্বত:প্রলাদিত হয়ে এগিয়ে গিয়ে পরিচিত হয়েছিলাম। প্রথম দেখায় কী লাজুক প্রকৃতির নম্র ছেলে বলে মনে হয়েছিল সৌরভকে? তবে আলাপনে প্রাণ আপন করে নিয়েছিল সৌরভ ওর পাঠ-বিশ্লেষণে, ভাবনার আলোকমালা প্রক্ষেপণ করে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রের আড্ডার স্মৃতি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আমি নবরূপে প্লাবিত হয়েছি জা.বিতে সৌরভ সান্নিধ্যে। ফলে ক্যাফেটেরিয়া- শ্রেণিকক্ষের বাইরেও আমাদের বিচরণ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে, কামালউদ্দিন হলে, আজাদের কক্ষে।




আমার দৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই একটাসৌরভ বলয় গড়ে উঠেছিল- সৌরভ, আজাদ (. কুতুব আজাদ, উপ-পরিচালক, বাংলা একাডেমি), সাঈদ (মোহাম্মদ আবু সাঈদ, সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং উপপরিচালক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা)) আর শাকিলকে আহম্মেদ, সহযোগী অধ্যাপক, সরকার রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) ঘিরে। একই হলেরে ফ্লোরে অবস্থানগত কারণে সেই বলয়ে ঢুকে পড়তাম কখনো আমি, কখনোস্বাস্থ্য বিশারদমিঠু (আব্দুল মুমিত চৌধুরী) আজাদের তিনতলার কর্ণারের কক্ষটা রাতভর আলোকিত হয়ে থাকতো আমাদের প্রাণবন্ত আড্ডায়, স্বপ্নভরা বিতর্কে-সতর্কে

 

.

গভীর পাঠ প্রীতির কারণে লেখালেখির প্রতি সবিশেষ আগ্রহ দেখেছি সৌরভের মাঝে। জীবনকে সাজাতেও চেয়েছিলো নিজের মতোন করে। কতটা পেছিলো সে প্রশ্ন অবশ্য করা হয়ে ওঠেনি কখনো। কিন্তু দেখা হলে প্রসঙ্গক্রমে ডেমোক্র্যাচি ওয়াচ থেকে দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকা কিংবা গ্রামীণ ফোনের চাকুরি জীবন নিয়েও অনেক কথা হতো। অসম্ভব ভালোবাসতো প্রিয়তমা স্ত্রী সোহানা ভাবিকে, আদরে আনন্দে রাখতে আপ্রাণ সচেষ্ট ছিলো দুপুত্রকে, ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতেও নানা ভাবনার কথাও বলতো। তাদের রেখে সৌরভ আজ অসীম অনন্তলোকে কেমন আছে জানতে বড্ড মন চায়। আবার নিশ্চিতভাবেই মানি- একজন সত্যিকারেরভালো মানুষ হিসেবে বন্ধুটি নিশ্চয় নিজের মতোই আছে। সেখান থেকে দেখছে শত প্রতিকূলতায় আমাদের বেঁচে থাকাও

 

.

অনেক ঘাটের জল খেয়ে আমার অবশেষে প্রিয় শিক্ষকতার নেশাকে পেশাতে পরিণত করতে পারার সংবাদে সৌরভ দারুণ খুশি হয়েছিলো। নিয়মিত ফেসবুকে ভাব-অনুভব শিরোনামে জীবনী রচনাকে ইতিবাচক কাজ হিসেবে দেখতো। কখনো সমালোচনাও করতো, তথ্যগত বিষয় নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতো, প্রয়োজনীয় সংযোজন-সংশোধনে সৌরভের মতামতকে মূল্য দিতাম। আমাদের ভাসানটেক সরকারি কলেজের আনন্দময় সহশিক্ষার সৃজনশীর আয়োজনমঙ্গল আসর পরিচালনা নিয়েও অনেক কথা হতো। শিক্ষার্থীদেরঘরে ঘরে গ্রন্থাগার গড়ে তোলার আন্দোলনে সাহস জুগিয়েছে, মঙ্গল আসরের পাঠচক্র এবং শিক্ষা সফরে জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-স্মারকসৌধ পরিদর্শনকে ভীষণ উপযোগী বলে প্রাণিত করেছে।

মঙ্গল আসরের সাথে শুরু থেকেই আমাদেরই দুজন প্রাণপ্রিয় বন্ধু আজদ এবং হিটো নিরবে জড়িত আছে জেনে অসম্ভব খুশি হয়ে নিজেও সক্রিয়তার আশাবাদ প্রকাশ করেছিলো। চলচ্চিত্রপ্রিয় এই বন্ধুটিকে আমি অনুরোধ করেছিলাম তার মনে দাগ কাটা কয়েকটি বিশ্বসেরা চলচ্চিত্র কয়েকজন চলচ্চিত্রকারের সৃজনীকর্ম নিয়ে সময় সুযোগ মতোন মঙ্গল আসরের শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনায় উপস্থিত থাকতে। বলেছিলাম চলচ্চিত্র এবং চিরায়ত সাহিত্যের কিছু বইয়ের উপর আলোচনা লিখতে। রাজি হয়েছিলো কিন্তু করোনা সেই সুযোগ কেড়ে নিলো। 

 

.

সৌরভদের আবাস ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায়। আমিও একসময় আদাবরে থাকতাম। তখন মানিকগঞ্জের সরকারী দেবেন্দ্র কলেজে যাতায়াত করতাম ঢাকার বাসা থেকেই। মাঝে মাঝে সকালে রাস্তায় রিকসার জন্য অপেক্ষারত আমার সাথে আকস্মিকভাবে গুলশানের অফিস পানে ছুটে চলা সৌরভের দেখা মিলতো। ওর গাড়িতে নামিয়ে দিতো শ্যামলীতে। যোগাযোগ কমবেশি সবসময়ই ছিলো, নিয়মিত দেখা না হলেও। কথা হতো ফোনে, পারিবারিক বিষয়ে খুব কম কথা হতো, আলোচনা জুড়ে থাকতো লেখাপড়া-শিক্ষার মান-অভিমানসহ নানাবিধ দেশচিন্তার বিষয়ে চর্চা চলতো। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিয়ে ভেবেছে। শিক্ষার সৃজনশীলতা নিয়েও ছিলো বহুমাত্রিক প্রশ্ন। বিশেষ করে দু:সময়গুলোতে ওর সাহস জোগানো ফোন আমার প্রাণশক্তি উদ্দীপ্ত করতো। খুউব মিস করছি, করবো রে বন্ধু সৌরভ- তোকে

 

১০.

আলোকিত আলাপনের অনেক কথাই মনে পড়ছে আজ। সৌরভকে বহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চার একজন নিরন্তর সাধক বলে স্বীকার করতে কোন সংশয় নেই আমার। বন্ধুটি আমাদের প্রকৃত অর্থে সংস্কৃতিবান সমঝদার ছিলো। সৌরভ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় একজন সমৃদ্ধ মানুষ ছিলো। জাতপাতের সংকীর্ণতা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করেনি। তার ধারণা- সম্প্রীতিই মানবতার রক্ষাকবচ। সকল ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যেতে উদ্দীপ্ত করেছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার ভেতর দিয়ে জীবনের অভীষ্টে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে প্রাণিত করেছে। দেশ-বিদেশের রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশ সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে কত কথাই না হয়েছে আমাদের। প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষ সৌরভ বাংলাদেশে কর্মমুখী, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক শিক্ষার প্রসারে স্বপ্নের কথা শোনাতো। মুক্তবুদ্ধির এই মানুষটিকে তীব্রভাবে অনুভব করবো আমৃত্যু

 

১১.

বিভিন্ন বিষয়ে ওর ধারণা স্বচ্ছ ছিলো বলে কথা বলে সমৃদ্ধ হতাম। সব বিষয়ে আমরা যে সহমত পোষণ করতাম তা মোটেই নয় কিন্তু আমাদের মতান্তর কখনো মনান্তরে গিয়ে ঠেকেনি। অন্যের মতামতকে গ্রাহ্য করার মানসিকতা ছিলো বলেই বন্ধুত্বের বন্ধন সুরভিত ছিলো, সৌরভ ছড়িয়েছে আজীবন। প্রচলিত ভাবনায়ঠোঁটকাটা' স্বভাবের মানুষ ছিলো কী না সেই বিতর্কে না গিয়েও বলতে পারি স্ব-ভাবে সৌরভ দারুণ স্পষ্টভাষী মানুষ ছিলো আমৃত্যু। সৌরভের নিরলস জ্ঞানচর্চা প্রীতি আমাদের প্রজন্মের অনেকের কাছেই অনুসরণযোগ্য হয়ে থাকবে বলেই বিশ্বাস করি। অনেক বিষয়ে গভীর অনুসন্ধিৎসার কারণেও তাকে আমরা স্মরণ রাখব আমাদের প্রয়োজনেই। সৌরভের অকালে চলে যাওয়া অপরিসীম বেদনার

 



১২.

সৌরভের চেতনা-জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা কবিগুরুকে স্মরণ করি। ছড়া সম্রাট সুকুমার রায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। তাঁর শয্যাপাশে বসে ‘‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। / তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’’ গানটি দুইবার শুনিয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। আর মৃত্যুর পর সুকুমার রায়ের স্ত্রীকে এক পত্রে লেখেন- “মৃত্যুকে তিনি মহীয়ান করে, তাকে অমৃতলোকের সিংহদ্বার করে দেখিয়ে গেছেন, আমরা যারা মর্ত্যলোকে আছি, আমাদের প্রতি তাঁর এই একটি মহার্ঘ্য দান। এই কথা স্মরণ রে তুমি সান্ত্বনা লাভ কর; ঈশ্বর তোমার শান্তি দিন, তোমার শোককে কল্যাণে সার্থক করুন।’’ সৌরভের স্ত্রী, সন্তানদের কোন শোক শান্তনা জানানোর ভাষা আমার অজানা বলেই ঠাকুর চরণে শরণাগত হলাম। 





 লেখক পরিচিতি
আবদুল্লাহ আল মোহন

সরকার রাজনীতি বিভাগ / একুশতম ব্যাচ

সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা

এপ্রিল ২০২১

 

 



ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা,


আরো পড়ুন