English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-২৯ ১১:১৪:১৯
আপডেটঃ ২০২৪-০৩-২৪ ০২:১৬:৪৪


পূর্বাচল: এক যে হবে শহর

পূর্বাচল: এক যে হবে শহর

বিপরীত স্রোত বিশেষ প্রতিবেদন

বাংলাদেশে একটি পরিকল্পিত বড় আধুনিক শহর গড়ে তোলার চিন্তা বহুদিনের ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটি ৩০ এপ্রিল ১৯৮৭ সাল থেকে পরিচিত হয়রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (রাজউক) নামে নতুন উদ্যোগে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর একটি পরিপূর্ণ শহর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয় তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের দিকে বর্তমান পূর্বাচলের এলাকাটিকে নিয়ে নগরায়ণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় স্থপতি পরবর্তীতে মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের আর্কিটেকচারাল ফার্মপ্রকল্প উপদেষ্টাএই কাজটি করে প্রথমে এই প্রকল্প ৩৬,০০০ একর জমি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়


প্রকল্পটিতে নানা বাস্তবতা প্রতিকূলতার পর ,২২৭.৩৬ একর জমি পাওয়া যায় যা প্রস্তাবিত জমির ছয় ভাগের এক ভাগ ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত প্রকল্পটিতে প্রাপ্ত জমির মধ্যে ঢাকা জেলার খিলক্ষেত থানার ১৫০ একর, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার ১৫০০ একর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার ৪৫৭৭.৩৬ একর নিয়ে মোট ৬২২৭.৩৬ একর অধিগ্রহণযোগ্য জমি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৯৯৫ সালে প্রকল্প হিসেবে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও বাস্তবে জমি অধিগ্রহণের সময় নানা প্রতিকূলতার কারণে দীর্ঘদিন কাজ শুরু করা যায়নি প্রকল্পটি সরকার অনুমোদন করেছে ২০০৫ সালে তখন শুরুতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের অর্ন্তভুক্ত ৪৫৭৭.৩৬ একর জমি নিয়ে কাজ শুরু হয় নারায়ণগঞ্জের সকল জটিলতা কাটাতে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায় গাজীপুর অংশের বাকি জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১২-১৩ সালের দিকে গাজীপুরে স্থানীয়দের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কাজের গতি কমিয়ে দেয় পর্যন্ত চার দফায় পূর্বাচলের পরিকল্পনা পরিবর্তিত কিংবা বর্ধিত হয়েছে 

সর্বশেষ লে আউট নকশায় প্রকল্পটি ৩০টি সেক্টরে বিভক্ত আবাসিক প্লট হিসেবে ৩৮.৬০% , প্রশাসনিক, ইউটিলিটি অন্যান্য ১৬.৪৫%, লেক বা খালের জন্য .৬০%, সড়ক ফুটপাথের জন্য ২৬.১৫% এবং ক্রীড়া, পার্ক বনায়ন ইত্যাদির জন্য ১১.২০% জমির বরাদ্দ রয়েছে উক্ত প্রকল্পটিতে ২৫০১৬টি আবাসিক প্লট রয়েছে এছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩৫৬৫টি প্লট রয়েছে, যার মধ্যে ১৭টি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক রয়েছে (উক্ত ব্লকগুলোতে ৬০,০০০টি তৈরি অ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তর করা হবে), ৪৭২টি প্রশাসনিক প্লট, ১০৩৩টি বাণিজ্যিক প্লট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরবান ফ্যাসিলিটির জন্য ২০৪৩টি প্লট অর্ন্তভুক্ত কুড়িল-পূর্বাচল ১৩.৩৩ কি.মি. দীর্ঘ ৩০০ ফিট রাস্তার মাধ্যমে বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রয়েছে উক্ত প্রকল্পে মেট্রোরেল সংযুক্ত হলে যাতায়াত ব্যবস্থা আরো সহজতর হবে

এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর পঁচিশ বছর পার হয়ে গিয়েছে প্রকল্পের প্রধানের দায়িত্বে এই পর্যন্ত দশজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর এসেছেন ফলে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, এই শহর কি কখনো বাস্তবে হবে, নাকি রূপকথা হয়েই থাকবে?

 

একজন উজ্জ্বল মল্লিক তার প্রচেষ্টা


ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মল্লিক

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প একটি ধীর অনগ্রসর প্রকল্প হিসেবেই বিবেচিত হওয়া শুরু হলো এক পর্যায়ে এর দশম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মল্লিক কর্তৃপক্ষ কয়েকটি কারণে তাকে এই দায়িত্ব দেয় তিনি দীর্ঘদিন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালকসহ নানা পদে কাজ করেছেন সেই অভিজ্ঞতা তাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে কেননা এর আগে যারা প্রকল্প পরিচালক হয়েছেন তাদের বড় অংশই এসেছেন রাজউকের বাইরে থেকে এছাড়া আলোচিত র‌্যাংগস ভবন ভাঙাসহ বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মল্লিক পূর্বাচলকে শুরু থেকেই একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি 

দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই পূর্বাচল নিয়ে যতো স্টাডি হয়েছে তার রিপোর্ট খোঁজা শুরু করেন উজ্জ্বল মল্লিক কিন্তু রাজউকসহ বিভিন্ন স্থানে নথি রক্ষণাবেক্ষণে দুর্বলতার কারণে কোথাওপ্রকল্প উপদেষ্টা’- এর মাধ্যমে করা প্রথম ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টটি পাচ্ছিলেন না অবশেষে সেটি তিনি খুঁজে পান বুয়েটের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে বেশ কয়েকটি ভলিউমে করা সেই রিপোর্ট ফটোকপি করে মনোযোগ দেন প্রকল্পের উৎস সম্পর্কে

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প নিয়ে কোনো প্রকাশনা ছিল না এতো বড় শহরের কাজ হচ্ছে, এর পেছনে কোনো রিসার্চ নেই, নেই কোনো নথির সংরক্ষণ এই অবস্থায় দায়িত্ব নেয়া প্রসঙ্গে উজ্জ্বল মল্লিক বিপরীত  স্রোতকে বলেন, ‘এটা আমার কাছে শুধু চাকরি নয়, এটি আমার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ আমি রাজউকে জয়েন করি ২০০০ সালে ২০০৯ সালে পূর্বাচলের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে এসে প্রথম পূর্বাচল সম্পর্কে ধারণা পাই এরপর থেকে আমি নানা ভাবে এই প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত ২০১৬ সালে সুপারেন্টেন্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে প্রমোশন পাই আমি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি ২০১৮ সালে বর্তমানে আমি প্রকল্পটির দশম প্রকল্প পরিচালক প্রথমে আমি ঠিক করলাম আমি কী করতে পারি আমার প্রাথমিক টার্গেট কী হওয়া উচিত আমাকে যে কাজ দেয়া হয় সেই কাজটির যথাযথভাবে সম্পাদন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকি প্রথম কাজ জমির মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেয়া সে-প্রেক্ষিতে রাস্তা ইউটিলিটি সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে প্রকল্পের বিদ্যুৎ, পানি গ্যাস সরবরাহের কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আওতাধীন আমার আওতায় আছে রাস্তা, ব্রিজ, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, লেক, স্কুল অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ আমি সেই লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করলাম

উজ্জ্বল মল্লিক স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘শুরু থেকেই এখানে এসে আমি বুঝতে চাইতাম, আমার ভূমিকা কী? এক সময় এখানে ১৭টি গ্রুপ মাটি কাটার কাজ করেছে কিন্তু কোনো ফলাফল দেখছিলাম না দৃশ্যমান কিছু করতে প্রথমেই নজর দিয়েছিলাম ৩০০ ফিট রোড নির্মাণে কিন্তু কোথায় সেই রোডবড়ুয়া  বাজার থেকে সহকর্মীদের নিয়ে বড় নৌকায় করে বালু নদী দিয়ে চললাম এটাই ছিল ৩০০ ফিট রাস্তা! আজ কিন্তু এটা বাস্তবতা রাস্তাটি এখন অন্যতম ব্যস্ত রাস্তায় পরিণত হয়েছে


৩০০ ফিট রাস্তা

পূর্বাচল কেন অন্য শহর থেকে আলাদা তা বলতে গিয়ে উজ্জ্বল মল্লিক জানান, ‘গুলশান, বনানী বা অন্য যে কোনো এলাকায় আমরা হয়তো কিছু আবাসনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি কিন্তু সার্বিক ভাবে একটি শহরের পরিপূর্ণ নাগরিক সুবিধা বলতে যা বোঝায় তা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায় নি পূর্বাচলে সব ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে প্রতিটি জায়গা ডিমার্ক করা এখন পর্যন্ত চারবার প্রকল্পের লে-আউট নকশার সংশোধন করা হয়েছে এই সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যতোটা সম্ভব প্রকল্পটিকে কার্যকর সময়োপযোগী করা যেমন এলাকার ভেতরে একটি বনাঞ্চল আছে, যা আমরা প্রাকৃতিক কারণে সংরক্ষণ করেছি ফলে এই জায়গাটিতে যে স্টেডিয়াম করার কথা ছিল সেটি সরিয়ে নিয়ে পূর্বাচল প্রকল্পের এক নাম্বার সেক্টরে ৩৭ একর জায়গার ওপরশেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামহিসেবে নির্মিত হচ্ছে একই ভাবে আইকনিক টাওয়ার বাণিজ্যমেলার জন্য প্রকল্পের ১৯ এবং নাম্বার সেক্টরে ব্যবস্থা করা হয়েছে’ 


নির্মাণাধীন ব্রিজ

বর্তমান কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মোট ভূমি উন্নয়নের কাজের মধ্যে হয়তো % কাজ অসমাপ্ত আছে কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোড হয়ে গিয়েছে প্রকল্পে ৩২০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২৫০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে প্রকল্প এলাকায় ৬৫টি ব্রিজ এর মধ্যে ৪০টি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, পাঁচটি ব্রিজ সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় বর্তমানে নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা কম উল্লেখ্য রাস্তার কাজ দ্রুত করা গেলেও ব্রিজের কাজ জোর করে করা সম্ভব নয়, প্রতিটি ঢালাই সময় মতো করতে হয় বাকি ২০টি ব্রিজ শেষ হতে ২০২০ সাল পার হয়ে যাবে তবে এই ব্রিজ শেষ না হলেও মানুষের চলাচলে অসুবিধা হবে না যেহেতু বিকল্প পথ আছে


নির্মিত ব্রিজ

এই প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে ,৭৮২ কোটি টাকা যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বাকি টাকা বাড়িঘর তৈরির পর ব্যয় হবে ফুটপাথ তৈরি হবে, রাস্তার ফিনিশিং করতে হবে এখন ড্রেন অস্থায়ী ভাবে করা হয়েছে সব ইউটিলিটির সাপ্লাই নিশ্চিত হলে আরসিসি ড্রেন করা হবে এই শহরের মোটামুটি ফ্রেম আউট করা হয়ে গিয়েছে এপ্রিল-অক্টোবর বর্ষার জন্য লেকের কাজ করা যায় না এখানে পানি সরবরাহের কমিটমেন্ট করেছিল ওয়াসা ২০১২ সালে ওয়াসা তা করতে অসম্মতি জানায় ২০১২-১৬ চার বছর লাগলো পানির ব্যবস্থা করতে পিপিপি- মাধ্যমে এর সমাধান হচ্ছে পিপিপির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে অপারেশন মেইনটেনেনসের সুযোগ থাকবে পানির কোয়ালিটি ঠিক হচ্ছে কিনা সেটা দেখা হবে ১১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে পরবর্তী চার বছর লাগবে পূর্বাচলে পানি নিশ্চিত করতে দ্রুত কাজ করার জন্য বিদ্যুৎ ওভারহেড লাইন হচ্ছে পরে আন্ডারগ্রাউন্ডে হবে গ্যাস আনা যায় কিনা চিন্তা চলছে কেননা যখন এই প্রকল্প শুরু হয় তখন গ্যাস পাওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল

কবে নাগাদ বসতি গড়ে উঠতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, ‘এরই মধ্যে ১৯,০০০টির প্লট জমির মালিকদের বাড়ি করার জন্য বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে তারা যে কোনো সময় রাজউক হতে প্ল্যান পাশ করে তাদের বাড়ির কাজ শুরু করতে পারেন

যারা বসবাস করবেন তাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা কী কী নিশ্চিত করা হচ্ছে জানতে চাইলে উজ্জ্বল মল্লিক জানান, ‘তারা যে বাড়ি বানাবেন, বসবাস করবেন তার প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে ১৬ লাখ মানুষ পূর্বাচলে থাকবেন বাইরে থেকে আরো লোক কাজে আসবেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি ঘটবে স্বাধীনতার পর রোড নেটওয়ার্ক ছিল সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার এখন পূর্বাচলের ভেতরই ৩২০ কিলোমিটার রোড হচ্ছে ২৫ বর্গ কিলোমিটার হচ্ছে পূর্বাচলের এরিয়া শীতলক্ষ্যা বালু নদীর তীর ঘেঁষে এটি পরিবেশ বান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে উঠছে ১৪৪ একর জায়গা বনাঞ্চল হিসেবে সংরক্ষিত আছে এখানে কোনো স্থাপনা হবে না প্রায় ৪৮ কিলোমিটার  লেক/খাল আছে ছোট ছোট নালাকে আমরা বড় করে খালে পরিণত করেছি যে কোনো জায়গা থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ওয়াটার বডি পাবেন লেকের দুই পাশে পাঁচ মিটার বা পনের ফিট করে ওয়াক ওয়ে থাকবে পাঁচ মিটার গ্রিন বেল্ট থাকবে লেকের পাশ দিয়ে ৮৬ কিলোমিটার সাইক্লিংয়ের পথ থাকছে প্রকল্পের ১৯ নাম্বার সেক্টরে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিসট্রিক্ট করা হচ্ছে তেমনি প্রত্যেকটি সেক্টরে বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে যাতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীটি যেন সহজে সংগ্রহ করা যায় প্রতি ২৫০ মিটারের মধ্যে ক্লিনিক্যাল হেলথ ফেসিলিটি পাওয়া যাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারটা থানা, দুটি পুলিশ লাইন হচ্ছে এবং ডিটেকটিভ অফিস হচ্ছে সিকিউরিটির প্রয়োজনে যে কোনো সময় শহর ক্লোজ করা যাবে


পুরো প্রকল্প এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার জলাধার রয়েছে

প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক আরো যোগ করেন, ‘পুরো এলাকায় ৯৩টি মসজিদ, ১০টি মন্দিরসহ চার্চ প্যাগোডা থাকবে এখন স্থানীয়ভাবে ৩০-৪০টি মসজিদ আছে মাদ্রাসা যেখানে আছে সেখানেই থাকবে আমরা এসব স্থাপনার জায়গা পরিবর্তন করি নি একই সিদ্ধান্ত  স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়েও পাশাপাশি স্কুল-কলেজে খেলার মাঠের জন্য আলাদা জমির সংস্থান রয়েছে এখানকার একটি পুরানো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো ইউসুফগঞ্জ স্কুল এদের জায়গা ছিল ৪০ কাঠার মতো এখন পরিবর্তিত অবস্থায় তাদের প্রতীকী মূল্যে মাত্র ,০০১ টাকায় ১৪৩ কাঠা জমি দেয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে স্কুল বিল্ডিং করে দিয়েছে রাজউক আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনতা স্কুলের জমি সংস্কারের কাজ করে দিয়েছে রাজউক ২৫ হাজার প্লটের মধ্যে প্রায় সাত হাজার প্লট দেয়া হয়েছে যারা ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ এখানকার আদিবাসী ছিলেন তাদের প্রায় এক চতুর্থাংশ জায়গা তাদের দেয়া হয়েছে এমনও হয়েছিল ২০ বছরেও তারা তাদের প্লট বুঝে পান নি এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে স্থানীয় লোকদের নানা ভাবে আমরা কাজে লাগাতে চাচ্ছি তাদের সঙ্গে যারা এখন প্লট নিয়েছেন সে সব ব্যক্তিদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে অনেক শীর্ষপদের ব্যক্তিগণও স্থানীয়দের সঙ্গে প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক বজায় রাখছেন যা এখানে চমৎকার সামাজিক পরিবেশ তৈরি করেছে আমরা আশাবাদী ২০২৫ সালের মধ্যে পরিপূর্ণ বসবাসযোগ্য সচল ব্যস্ত শহর হিসেবে পূর্বাচল নতুন শহরকে দেখা যাবে’ 

 

২০১৯ এশিয়ান টাউনস্কেপ জুরিস অ্যাওয়ার্ড অর্জন 

পূর্বাচল প্রকল্পে দশ বছর ধরে ছুটির দিনেও প্রতি শনিবার নিয়মিত আসেন উজ্জ্বল মল্লিক দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি চেষ্টা করেন কীভাবে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পকে পরিচিত করা যায় কেননা যদি তা আলোচনায় আসে তবে কাজের ক্ষেত্রেও তা গতি আনবে সে ভাবনা থেকেই এশিয়ান টাউনস্কেপ অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য অংশগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয় তিনি ভেবেছিলেন, পুরষ্কার পাওয়া যাক বা না যাক, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পূর্বাচলের নামটি অন্তত আলোচিত হবে ছয় মাসের প্রস্তুতির পর প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন তারা। জাপানের ফুকুওকা এশিয়ান আরবান রিসার্চ সেন্টার, এশিয়ান হ্যাবিটেট সোসাইটি -এর এশিয়ান টাউনস্কেপ ডিজাইন সোসাইটির সহায়তায় ইউএন হ্যাবিটাট রিজিওনাল অফিস ফর এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক প্রতি বছর এশিয়ান টাউনস্কেপ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে এই পুরষ্কার দেয়ার উদ্দেশ্য স্থানীয় ইতিহাস এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এশিয়ার যে শহর বা সংগঠনগুলো সাসটেইনবল  ডেভেলপমেন্ট গোল এসডিজি-এর ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে সেই তাৎপর্যপূর্ণ প্রচেষ্টাকে সম্মানিত করা 

২২ মার্চ ২০১৯ নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক . খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক এশিয়ান টাউনস্কেপ অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য অংশগ্রহণের সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি ইমেইল করেন যা পেয়ে পূর্বাচলের প্রজেক্ট ডিরেক্টর উজ্জ্বল মল্লিক অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন রাজউকের চেয়ারম্যানের অনুমোদনের পর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাটা এক্সপার্টস লিমিটেডের সহায়তায় তিনটি ধাপে পূর্বাচল নতুন শহরের তথ্য জাপানের ফুকুওকায় ইউএন হ্যাবিটাট রিজিওনাল অফিস ফর এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক-এর অফিসে পাঠানো হয়


২০১৯ সালে এশিয়া প্যাসিফিক ভুক্ত আটটি দেশ থেকে মোট ৩৬টি প্রজেক্ট এশিয়ান টাউনস্কেপ অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য জমা পড়ে ৩০ আগস্ট ২০১৯ অ্যানাউন্সমেন্টস অফ একজামিনেশন আউটকাম সার্টিফিকেট-এর মাধ্যমে জানানো হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটি এই প্রতিযোগিতায় এশিয়ান টাউনস্কেপ জুরি অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছে যা ছিল সত্যিই বিস্ময়কর সাফল্য বাংলাদেশের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প ছাড়া চায়নার চারটি, জাপানের তিনটি, দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি, ইন্দোনেশিয়া, ভারত মালয়শিয়া থেকে একটি করে প্রকল্প পুরষ্কার জয় করে

২২-২৩ নভেম্বর ২০১৯ আয়োজক সংস্থা দি অ্যাসোসিয়েশন অফ ল্যান্ডস্কেপ কনসালটেন্ট, হংকং, চায়না-এর উদ্যোগে টেকনলজিকাল অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন ইন্সটিটিউট, হংকং- পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়

সম্মাননা স্মারক হাতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পদক গ্রহণ করেন রাজউকের চেয়ারম্যান . সুলতান আহমেদ, গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী এবং পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মল্লিক পরবর্তীতে দেশে আসার পর ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট এই পদক হস্তান্তর করেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী জনাব রেজাউল করিম এম.পি পূর্তসচিব জনাব শহীদ উল্লা খন্দকার

 

আকাশ ছোঁয়া আইকনিক টাওয়ার

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১৯ নাম্বার সেক্টরে প্রায় ১০০ একর জায়গায় সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে আইকনিক টাওয়ার বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সাবেক পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পূর্বাচলে আইকনিক কিছু করা যায় কি না তা চিন্তা করেছিলেন এর মধ্যে আমেরিকা প্রবাসী ব্যবসায়ী অর্থপেডিক সার্জন ডা. কালীপ্রদীপ চৌধুরীর মালিকানাধীর কেপিসি গ্রুপ বিষয়ে আগ্রহী হয় কালীপ্রদীপ চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের পারিবারিক বন্ধু প্রথমে তাকে কামরাঙ্গিচরে জায়গা দেখানো হয় তিনি রাজি হন নি কিন্তু পরে পূর্বাচলে ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণে তিনি আগ্রহ দেখান কালীপ্রদীপ চৌধুরী কাজে অনেকবার বাংলাদেশে আসেন


এই স্থানেই তৈরি হবে আইকনিক টাওয়ার

রাজউক আইকনিক টাওয়ার বানানোর জন্য প্রথমে ৬০ একর জায়গা অকশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় দফায় কাঠা প্রতি ধরা হয় দশ লাখ টাকা কিন্তু কেপিসি গ্রুপ সহ কেউই এই নিলামে অংশ নেয় নি এরপর কেপিসি গ্রুপের আগ্রহে আবার অকশন দেয়া হয় এবার জমির দাম ধরা হয় কাঠা প্রতি ৩৫ লাখ একর প্রতি ২১ কোটি কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে কেপিসি বা অন্য কেউ এতে অংশ নেয় নি শোনা যায় কেপিসি একর প্রতি ১৫ কোটি দিতে চেয়েছিল এসব অনিশ্চতায় আইকনিক টাওয়ারের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত হয় রাজউকের আরেকটি প্রকল্প জলসিঁড়িতে তখন কাঠার দাম ৫০ লাখ টাকা ফলে এখানেও কাঠার দাম ৫০ লাখ টাকা ধরা হলো এবার ১০০ একর জমি ধরে একর প্রতি ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকায় আইকনিক টাওয়ারের জন্য জমি অকশনের ঘোষণা দেয়া হলো এবার কেপিসি অংশ নেয় পাশাপাশি জাপানের কাজিমা কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথ ভাবে নিলামে অংশ নেয় সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড কেপিসি দাম কোট করে একর প্রতি ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা আর সিকদার গ্রুপ করে একর প্রতি ৩০ কোটি ২৫ লাখ ১০০ টাকা এছাড়া টেকনিকাল দিক দিয়ে কেপিসির চেয়ে সিকদার গ্রুপ কাগজপত্রে এগিয়ে থাকায় তারা কাজটি করার সুযোগ পায় যদিও এখানে অনেক নিয়ম মেনে চলতে হবে রাজউককে সাত বছরের মধ্যে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে কনসোর্টিয়াম অফ পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস অ্যান্ড কাজিমা কর্পোরেশন লিমিটেড ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির রেজিস্ট্রেশন করতে চেয়েছিল, যা নিলাম দরপত্রের শর্তানুসারে রাজউক কর্তৃপক্ষ দেয়নি সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের পর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে


শিল্পীর চোখে আইকনিক টাওয়ার

বাংলাদেশের পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড এবং জাপানের কাজিমা কর্পোরেশন সম্মিলিত ভাবে ১১১ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের কাজ পেয়েছে কোরিয়ার আর্কিটেকচারাল ফার্ম হিরিম আর্কিটেক্টস আইকনিক টাওয়ারের নকশা প্রণয়ন করছে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারের ভারতীয় অফিস, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করছে ফ্রান্সের আর্কটাইপ চায়নার পাওয়ার চায়না কোম্পানি ল্যাঙ্গুয়েজ, লিবার্টি লিগ্যাসি ভাষা, স্বাধীনতা এবং পরম্পরা এই তিনটি থিমের ওপর আইকনিক টাওয়ার নির্মিত হবে টাওয়ারের ৫২ তলা ভাষা, ৭১ তলা স্বাধীনতা এবং ১১১ তলাকে পরম্পরার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে

আইকনিক টাওয়ার প্রকল্পটির প্রিলিমিনারি মাস্টার প্ল্যান  পর্যালোচনার জন্য জাতীয় অধ্যাপক . জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কারিগরী কমিটি গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয় তাঁর পরামর্শ মতে বুয়েটকে সিয়োজিত করে একটি পরামর্শক টিম গঠনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে জাতীয় অধ্যাপক . জামিলুর রেজা চৌধুরী গত ২৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মৃত্যুবরণ করায় কারিগরী কমিটির সভাপতি পরিবর্তন করা হবে কারিগরী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মাস্টার প্ল্যান/লে আউট প্ল্যানসহ ডিটেইল ড্রইং ডিজাইন চূড়ান্ত করা হবে

 

বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উৎযাপন উপলক্ষ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পেবঙ্গবন্ধু জন্ম শতবার্ষিকী স্মারক সৌধস্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে


সে লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এবং প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর, প্রধান প্রকৌশলী, রাজউক প্রধান স্থপতি, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয় বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণের জন্য প্রকল্পের সেক্টর নাম্বার ১৫, সড়ক ২০৩, প্লট ১৭ (ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান প্রদর্শিত পার্ক হিসেবে) চিহ্নিত করা হয়  গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত  প্রতিমন্ত্রী জনাব শরীফ আহমেদ এম.পি. সরেজমিনে সাইটটি পরিদর্শন করেন স্থাপত্য নক্সা চূড়ান্তকরণের জন্য স্থাপত্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেন সে মোতাবেক স্থাপত্য অধিদপ্তর কর্তৃক নকশা প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে

 

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটিকে একটি আধুনিক স্বয়ংসম্পূর্ণ আদর্শ আবাসিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্পে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পটিকে মানুষের বসবাস উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলাই প্রকল্পটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ  


মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান 

সহযোগিতা:

মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন পলাশ

ছবি:

পারভেজ হাসান অপূর্ব সংগ্রহ


 


ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা, অর্থনীতি,
সাবক্যাটেগরিঃ উন্নয়ন,


আরো পড়ুন