রুবাইয়াত হাসান সিরাজ
হাজার অতীত জন্ম দাগের মতো
ফুটে থাকে তারায় তারায়
কে যেন ছিলাম, মনে তো পড়ে না
ছায়াপথ শরীরে হারায়
কে আমি কোথায়?
রুপালী পর্দার নামকরা মানুষ আমি। এক একটা চরিত্রের মহাচিত্রকর আমার এক একটা অভিনয়। বক্স অফিস হুমড়ি খেয়ে পড়ে আমার মুন্সিয়ানায়। আমি হারলে হেরে যায় দর্শক, আমি জিতলে আত্মহারা হয় সেই মানুষ। কেন হয় তা জানি না কিন্তু আমার জয়েই তার প্রলেপ ঘটে না পাবার হতাশা। লক্ষ-কোটি মানুষের প্রতিদিনের বিনোদনের খোরাক আমি। একটা হাসি, একটু বাইরে যাবার জোগাড়, আমার পোশাক, আমার কথা সবকিছু অনুসরণ করছে সোশাল মিডিয়া। আমিময় আমার চারপাশ। শেষ রাত্রিরে নিজেকে শুধাই, আসলে কে আমি, কোনটা আমি? এক এক নতুন মোড়কে আমার চেহারা, আমার পেশা, আমার পোশাক, আমার হাসি। সেই একজন আমি বহু ঠিকানায়। কিন্তু কখনো হাসিয়ে, কখনো কাঁদিয়ে আমি সেই আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি কে আমি, কোথায় আমি? শুনতে চাই, জানতে চাই।
দেশের মানুষ আমায় ভোট দিয়েছে। প্রতিদিন আমি সবার কাছে আসি মন ভোলানো একরাশ মুখের বাহার নিয়ে। কখনো আমার কথায় কাউকে ভরসা দিই, কখনো বলতে হয় তাই বলতে থাকি। বিপদে পাশে থাকবো বলে যে বিশ্বাস দিয়েছি, এখন ঠিক জানি না কেন বলেছি, তবু বলেছি কারণ বলতে হয় তাই বলতে থাকি। দেশের ক্রান্তিকালে মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে। আমি জানি কিন্তু জানি না। একটা ভূ-খণ্ডের প্রতিনিধি আমি। তাই যা ইচ্ছে তাই করে স্বনামে খ্যাত পদটি আমার চাই। তোরা যে যাই বলিস ভাই, হট সিটটা আমার চাই। সাথে মানুষের সারাদিনের আনাগোনা, বাহবা, অর্থ-অনর্থের মাঝে নিজেকে বড় ক্ষমতাধর মনে হয়। সংসার সুখের হয় ক্ষমতা-অর্থের জোরে। কিন্তু শেষ রাত্রিরে দূর গগণের ক্ষীণ স্বরে ঘুম কেটে গেলে নিজেকে অহেতুক জিজ্ঞেস করি, আসলে আমি কে? আমি কোথায়? শুনতে চাই।
সবকিছুর ছন্দ আছে। ঘরের সিলিংয়ে ঘুরতে থাকা ফ্যান, বুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া বাতাস, চোখের পাতা, পাখির ডাক, প্রকৃতির মাঝে ডুবে থাকা স্পন্দন। ছন্দ আর ছন্দ। ভালো-মন্দের হাজারো বছরের মাঝে রয়েছে ছন্দ। আলোর মাঝে যে ছন্দ, রাতের অন্ধকার সেই ছন্দকে জানায় অভিনন্দন। অসময় জানায় সময়ের ছন্দপতন। সবাই খুঁজে পেতে চায় নিজেকে। সবাই জানতে চায় আসলে কে সে । প্রতিদিনের আবরণে যতই ঢাকা হোক কৃত্রিমতায়, নিজেকে কি জানতে ইচ্ছে করেনা শেষ পর্যন্ত? শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় নিজের দিকে তাকিয়ে কি দেখতে পাই নিজেকে নাকি মিথ্যে প্রলোভনে ঢেকে গেছে শরীর-মন-বিবেক?
ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে আমি। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই বললেই চলে। আশেপাশে কালে-ভাদ্রে চোখে পড়ে রিকশা। সামনে শুধু অপলক চেয়ে আছে মেট্রোরেল। আমি সাধারণ মানুষ। আমার রোজগার-এর উপায় মানুষ। গামছা-তোয়াল-চিরুনী-সস্তায় পাউডার, নেইল কাটার, বাচ্চাদের ছোট খেলনা কী লাগবে বলেন দিতে পারবো আমি। অনেক কষ্টে গ্রাম থেকে এসএসসি পাশ করে ঢাকা আসা; কিছু আয়ের ব্যবস্থা হবে ভেবে। মুরুব্বীদের থেকে শুনেছিলাম ঢাকা আজব শহর। টাকা উড়ে এখানে। দিনাজপুর থেকে এত কিছু ভেবে মায়ের জমানো টাকা নিয়ে ঢাকায় কিছু করার আশায় পাড়ি দেয়া। মানুষ নাই। করোনা কি আমাদের দিকে তাকায় বলেন? কিছু বিক্রি না হলে খাবো কি? অনেক কষ্টে রাতে মাথা গোজার জায়গাটাও যায় যায়। ভাড়া, খাওয়া কী করে হবে বলেন তো? জীবনেও হাত পাতি নাই? সম্মানটাও বর্গা দিব? রিলিফ এর খানা কি আমাদের নাকি তাদের যাদের আছে ভুরি-ভুরি? কেউ বের হতে পারবে না। তাও বের হই, পেট লকডাউন হয়ে যাচ্ছে যে! নিজেকে জিজ্ঞেস করি কে আমি কোথায়?
মানুষ হয়ে জন্মাবার কী অসীম ভাগ্য নিয়ে আমরা জন্মাই। কী অসাধারণ এ মানবজন্ম! অথচ নিজেকে খুঁজে পাবার অদম্য ইচ্ছে প্রতিনিয়ত চেপে যাই জীবিকার লাগামহীন প্রয়োজনে। সময় আমাদের জানান দেয় এখন নিজেকে খুঁজে নেবার সময়। কে আমি? কোথায় আমি? জন্মের শুরু থেকে বারবার এই প্রশ্ন আর তার উত্তর খুঁজে নিতে নিজেকে ডুব দিতে হবে আজ।
এক একজন মানুষ এক একটি গল্প। প্রত্যেক গল্পের শুরু আছে, আছে শেষ। প্রত্যেক গল্পের নায়ক মানুষ নিজেই। নিজেকেই খুঁজে নিতে হয় নিজের ঠিকানা। প্রত্যেক মুখোশের ভেতরে রয়েছে আরেক আমির গল্প। আজ যদি ডুব না দেই তাহলে একদিন সময় আসবে, নিজেকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে নিশ্চয়ই।
লেখক পরিচিত
রুবাইয়াত হাসান সিরাজ
প্রধান নির্বাহী, গ্রাফাইট
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
ডা. আতাউর রহমান বিস্তারিত
বজলুল করিম আকন্দ বিস্তারিত
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইম.. বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
বোর্ডের চেয়ারপারসন নির্বাাচিত.. বিস্তারিত